নাহিদ বিন রফিক (বরিশাল):
নির্বিঘ্নে বোরো ধানের উৎপাদন বাড়াতে ক্ষতিকর পোকামাকড় দমন জরুরি। আর আলোক ফাঁদ ব্যবহারে তা অনেকটা সম্ভব। ইতোমধ্যে বরিশালের কৃষকদের মাঝে এর ব্যবহারের ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। বরিশালস্থ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়: চলতি মৌসুমে জেলায় ৫৩ হাজার ৩ শ’ ৯৭ হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৫৪ হাজার ৮ শ’ ৭০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে সদরে ৩ হাজার ৬ শ’ ৩০ হেক্টর, বাবুগঞ্জে ১ হাজার ৩ শ’ ৫৫ হেক্টর, উজিরপুরে ১৩ হাজার ২ শ’ ৪৭ হেক্টর, বাকেরগঞ্জে ২ হাজার ১ শ’ ৬০ হেক্টর, গৌরনদীতে ৬ হাজার হেক্টর, আলৈঝাড়ায় ১০ হাজার ৫০ হেক্টর, মুলাদীতে ১ হাজার ৮ শ’ ৭০ হেক্টর, হিজলায় ২ হাজার ৬ শ’ ৭৫ হেক্টর, মেহেন্দিগঞ্জে ৬ হাজার ৩ শ’ ১০ হেক্টর, বানারীপাড়ায় ৫হাজার ৪ শ’ হেক্টর এবং মেট্টোপলিটন কৃষি অফিসের আওতায় ৩ হাজার ৬ শ’ ৩০ হেক্টর।
এ প্রসঙ্গে উপপরিচালক হরিদাস শিকারী জানান, দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় বরিশালেও এবার বোরো ধানের আবাদ বেশি হয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য সর্বোচ্চ ফলন অর্জন করা। এ বাস্তবায়ন এনে দিতে পারে সঠিক পরিচর্যা এবং রোগপোকা দমনের মাধ্যমে। আর এসব বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেয়ার জন্য উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তবৃন্দ মাঠে সার্বক্ষণিক কাজ করছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশা করি এবার বাম্পার ফলন হবে। পোকা নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পোকা দেখাদিলেই কীটনাশক ব্যবহার এ প্রবণতা থেকে সরে আসতে হবে। তা না হলে আমাদের বন্ধুপোকাগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রযোজন হলে অবশ্যই কীটনাশক প্রয়োগ হবে। তবে কোন পোকার জন্য কী ধরনের কীটনাশক প্রযোজ্য তা পর্যবেক্ষণ করেই ব্যবহার করতে হয়। এজন্য আলোক ফাঁদ অত্যন্ত কার্যকরি একটি পদ্ধতি। ইতোমধ্যে জেলার প্রতিটি উপজেলায় এ পর্যন্ত ৬ শ’ ২৫ টি আলোক ফাঁদ ব্যবহার হয়েছে। যদিও এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। পুরো মৌসুমে এর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
এর অংশ হিসেবে উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে সম্প্রতি সদরের কাটুরাকাঠিতে আলোক ফাঁদ ও এর ব্যবহারের চাষিদের সচেতনমূলক সভার আয়োজন করা হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য আলী আকবর মজনুর সভাপতিত্বে আনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসার সাবিনা ইয়াসমিন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষি তথ্য সার্ভিসের প্রতিনিধি নাহিদ বিন রফিক, সহকারি কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মোনাছেফ আলী, উপসহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার সমীর কুমার দে, উপসহকারি কৃষি অফিসার ফেরদৌসী বেগম, গোবিন্দ লাল কুন্ডসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবৃন্দ।
প্রধান অতিথি কৃষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আলোক ফাঁদ এমন এক প্রযুক্তি, যার ব্যবহারে কীটনাশকের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পায়। পাশাপাশি অনিষ্টকারি পোকার উপস্থিতিও বোঝা যায়। এর খরচ খুবই কম। সহজে পোকা দমন করা যায়। পরিবেশ থাকে অনুকূলে। তাই সবাই মিলে এ পদ্ধতি ব্যবহার করলে ক্ষতিকর পোকা দমনে কার্যকর হবে। চাষের উৎপাদন খরচ কমবে, সে সাথে কৃষক হবেন লাভবান। ফসলে ব্লাস্টের উপস্থিতি আছে কীনা তা সনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট উপসহকারি কৃষি অফিসারকে নির্দেশ দেন। অনুষ্ঠান শেষে এ সংক্রান্ত লিফলেট বিতরণ করা হয়।
…
সংবাদ দাতা: টেকনিক্যাল পার্টিসিপেন্ট, কৃষি তথ্য সার্ভিস, কারিকর বিড়ির ব্রাঞ্চ সংলগ্ন, সাগরদি, বরিশাল;
ই. মেইল:tpnahid@gmail.com