এমদাদুল হক মিলন,দিনাজপুর প্রতিনিধি ॥
লিচু রাজ্য দিনাজপুরে : লিচু রাজ্য হিসেবে পরিচিত ও দেশব্যাপী লিচুর জন্য বিখ্যাত দিনাজপুরে দিন দিন লিচু চাষ বাড়ছে। প্রতি বছরই ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে লিচু চাষের জমির পরিমাণ। এখন সারা দেশে কম বেশী লিচু চাষ হলেও দিনাজপুরের লিচুর কদর আলাদা। রসালো ফর লিচু অনেকের কাছে রসগোল্লা হিসেবে পরিচত।
দিনাজপুরে এবার মধুমাসের ফল লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জেলার প্রতিটি লিচু গাছে শোভা পাচ্ছে থোকায় থোকায় মুকুল।
লিচু চাষি ও বাগান মালিক এবং বাগানের ইজারাদাররা লিচুর বাগানে মুকুল রক্ষায় পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে। বাগানে চলছে সেচ দেওয়া ও বালাইন নাশক কীটনাশক স্প্রে করার কাজ।
লিচু চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর দিনাজপুরের লিচু দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এবার পশ্চিমা বিশ্বের দেশ গুলোতে লিচু রফতানীর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এখানকার লিচু লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় প্রতি বছরই জেলাতে লিচু চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও প্রকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবারও দিনাজপুরে রেকর্ড পরিমাণ লিচুর ফলন হবে বলে তাদের আশা।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, এবার দিনাজপুর জেলায় প্রায় ৫ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হবে।।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্র জানায় চলতি বছরে দিনাজপুর জেলায় ৫ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দিনাজপুরের লিচু সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় দেশব্যাপী এর চাহিদা রয়েছে। এবার দিনাজপুরের লিচু পশ্চিমা বিশ্বের দেশ গুলোতে রফতানি করা হবে।
দিনাজপুরের লিচুর মধ্যে চায়না থ্রি, বেদেনা, বোম্বাই ও মাদ্রাজি,কাঠালী উল্লেখয্যেগ্য। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে এবার এসব প্রজাতির লিচুর বাম্পার ফলনের আশা করছে চাষীরা।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিনাজপুরের প্রতিটি বাগানে, বসতভিটায় বা আঙ্গিনার লিচু গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। মুকুলের সঙ্গে ফুলে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন আর ঝিঁ ঝিঁ পোকার ঝিঁ ঝিঁ শব্দে এলাকা মুখরিত হতে শুরু করেছে।
লিচু বাগানগুলোতে ফুল আসা থেকে লিচু আরোহণ পর্যন্ত ৩-৪ মাস লিচু বাগানের সঙ্গে সম্পৃক্তদের কর্মব্যস্ত বেড়ে যায়। ফুল আসার ১৫ দিন আগে এবং ফুল আসার ১৫ দিন পরে সেচ দিতে হয়। সেই অনুযায়ী গাছে মুকুল আসার সঙ্গে সঙ্গেই মুকুলকে টিকিয়ে রাখতে লিচু চাষী ও ব্যবসায়ীরা বাগানে স্প্রে শুরু করেছে। এছাড়াও মুকুল যাতে ঝড়ে না পড়ে সেজন্য গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি ও সার দিয়ে যাচ্ছে।
দিনাজপুরের যেসব স্থানে লিচু চাষ হয় তার মধ্যে সদরের মাসিমপুর, বিরলের মাধববাটী । বিরল উপজেলার মাধববাটী দিনাজপুর সদর থেকে প্রাায় ৯ কিমি পশ্চিমে এবং মাসিমপুর সদর উপজেলা থেকে প্রায় ২ কি:মি: পূর্ব দিকে অবস্থিত।
লিচু চাষী জানান, লিচুর ফুল আসা শুরু করার সাথেই শুরু করে দিতে হয় পরিচর্যা। নিয়মিতস্প্রে ও সেচ দেওয়া শুরু হয়েছে। লিচু গাছগুলোতে ফুল আসতেই রাজশাহী, রংপুর, চট্রগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার লিচু ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেছেন। তারা আগাম লিচু বাগান ক্রয় করছেন।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষন কর্মকর্তা সাফয়েত হোসেন জানান, কৃষি কর্মকর্তারা চাষীদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে। কোন সময়ে কোন কীটনাশক, বালাইনাশক ব্যবহার করা উচিত সে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।