টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের বিকল্প নেই – বাকৃবির সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি

বাকৃবির সপ্তম সমাবর্তন

রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ
কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনু, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,ময়মনসিংহ থেকেঃ

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন যুদ্ধে জয়লাভের জন্যই কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন অপরিহার্য। কেননা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃত্তি অর্জন ও স্থিতিশীলতা সংরক্ষণে কৃষির ভ’মিকাই মুখ্য। বর্তমান সরকারের নিরলস প্রচেষ্ঠায় জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত বৈরিতা মোকাবেলা করে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি আরও বলেন ২০২১ সালের মধ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা শতকরা ১৫ ভাগে নামিয়ে এনে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে বর্তমান সরকার “রূপকল্প-২০২১” ঘোষণা করেছে। এ ঘোষণায় অন্যান্য খাতের পাশাপাশি যথাযথভাবে কৃষির উপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের বিকল্প নেই। তাই দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য কৃষি খাতের উন্ন্য়নকে ত্বরান্বিত করতে কৃষক, কৃষিবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী সহ সকলকে সমন্বিত প্রয়াস চালাতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার ২৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্বাবদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন বাকৃবিতে হাওড় ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে যা নিঃসন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়ের গতিশীলতার পরিচয় বহন করে। তিনি আরো বলেন, ধান, গম, ভুট্টা, সবজি, মাছ ও মাংস উৎপাদনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ অব্যাহত ভাবে এগিয়ে চলছে । তা সত্বেও কৃষির ওপর বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা দেশের জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কম সময়ে উৎপাদনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। তিনি বলেন কৃষির উন্নয়নের উপরই আমাদের সার্বিক উন্নয়ন নির্ভরশীল।

কৃষিবিদদের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কৃষিখাতে আজ যে অভাবনীয় সাফল্য দৃশ্যমান এর পেছনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটসহ অন্যান্য কৃষিবিদরা। তারা নিরন্তর গবেষণার মাধ্যমে পরিবেশ উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবন সহ সব পর্যায়ে তা দ্রুত হস্তান্তর ও বিস্তারের কাজে নিজেদেও সারাক্ষণ নিয়োজিত রেখেছেন। এছাড়াও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টার ডিসিপ্লিনারি সেন্টার ফর ফুড সিকিাউরিটি, ফুড সেফটি ল্যাব, সামুদ্রিক মাৎস্য বিজ্ঞান, মাঠ গবেষণা ও শিক্ষাকেন্দ্রের প্রসংশা করেন।

সকাল ১০টায় বর্নাঢ্য সমাবর্তন শুভাযাত্রা শেষে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবর। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। এছাড়াও সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ এমপি,সিন্ডিকেট সদস্য আব্দুল মান্নান এম.পি. প্রমুখ।

সমাবর্তন বক্তা হিসেবে শিক্ষাবিদ ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, গত এক দশকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। অত্যন্ত অল্প সময়ের এ দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটিতে পৌছেছে। ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীর সংখ্যায় পৌছেছে প্রায় ৫ কোটিতে। সম্ভব হয়েছে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাঠপর্য্যায়ে কৃষকদের কাছে বিভিন্ন ই-সেবা পৌছেঁ দেওয়া। আমি আশা করব আপনারা আপনাদের জ্ঞান ও উদ্ভাবনী শক্তি ব্যবহার করে এই সেবাকে আরও উন্নত এবং এর প্রয়োগ ক্ষেত্রকে আরও বিস্তৃততর করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও দারিদ্র হ্রাসকরন প্রক্রিয়া সারা বিশ্বেও দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। যে বাংলাদেশকে স্বাধীনতার পর একটি “তলাবিহীন ঝুড়ি”-র সাথে তুলনা করা হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধে বিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন দেশটির স্থায়িত্ব নিয়ে অনেকের মনেই ছিল সংশয় – অত্যন্ত সাফল্যের সাথে বাংলাদেশ তা কাটিয়ে উঠেছে। “আজকের বাংলাদেশ” বিশ্বের তাই অনেকের কাছেই উন্নয়নের মডেল হিসাবে স্বীকৃত পেয়েছে।
ধর্মমন্ত্রী আলহাজ্জ্ব অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন ষোল কোটি মানুষের বাংলাদেশ আজ খাদ্যশস্যে উদ্বৃত্ত দেশ। ধান, গম, ভুট্টা ছাড়াও সবজি, মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম উৎপাদনে বিশ্বের বহু দেশেরই গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ ক্রমে এগিয়ে চলেছে। কৃষি খাতে এই যে অভাবনীয় অগ্রগতি এটি সম্ভব হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকারের দূরদর্শী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে। পুঁজি ও উপকরণ সহজলভ্য হওয়ায় নতুন নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে এগিয়ে এসেছেন বাংলার কৃষককুল, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক সম্প্রদায় ও কৃষি উদ্যোক্তাবৃন্দ, যাঁদের মিলিত উদ্যম ও শ্রমে দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে আমরা অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি।এই বিপুল সফলতা অর্জনে কৃষিবিদ তৈরির অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশংসনীয় অবদান রয়েছে।
সপ্তম সমাবর্তনে জুলাই-ডিসেম্বর ২০১০ সন থেকে জানুয়ারি-জুন ২০১৪ পর্যন্ত ডিগ্রিপ্রাপ্তদের মোট সংখ্যা ৪৯০৯ জন। এর মধ্যে স্নাতক ডিগ্রি প্রাপ্ত-১৯১৯ জন (ভেটেরিনারি অনুষদ-১৫৪, কৃষি অনুষদ-৭৪৩, পশুপালন অনুষদ-২২৫, কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদ-২০৭, কৃষি প্রকৌশল অনুষদ-১৫০, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং-৯২, মাৎসবিজ্ঞান-৩৪৮)। মাস্টার্স ডিগ্রীপ্রাপ্ত – ২৮৫১ জন এবং পিএইচ.ডি. ডিগ্রিপ্রাপ্ত – ১৩৯। এঁদের মধ্যে ১৭ জন পিএইচ.ডি. ২৫২জন মাস্টার্স এবং ৬১১জন স্নাতকসহ সর্বমোট ৮৮০ জন ডিগ্রিপ্রাপ্ত কৃষিবিদ সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। । ¯œাতকে ৭ জন ও ¯œাতকোত্তরে ৮৬ জন শিক্ষার্থীকে গোল্ড মেডেল দেওয়া হয় এবং ২৮ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য ৬ষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৮মার্চ ২০১১সালে সে সময় সভাপতিত্ত্ব করেছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *