***এ কিউ রাসেল***
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের ফল আনারস। ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে আদিনিবাস। বৈজ্ঞানিক নাম এনান্যাস সেটাইভ্যাস। পর্তুগীজ এনান্যাস থেকে আনারস শব্দের উৎপত্তি। অর্থ চমৎকার ফল। রাসায়নিক বিচারে ব্রোমাইল এ্যালকোহলের জন্য আনারস স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। রসালো আনারস রেড ইন্ডিয়ানদের ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম উপকরণ। তৈরি হয় উন্নত মানের মদ। খৃস্টোফার কলম্বাস ১৪৯৩ সালের নভেম্বরে আমেরিকা আবিস্কার করেন। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে যেসব অ™ু¢ত জিনিষের সাথে তিনি পরিচিত হন তার অন্যতম আনারস। তিনি আমেরিকা থেকে আনারস চারা ইউরোপে নিয়ে আসেন। বৃটেনে আনারস রাজকীয় খাবারের মর্যাদা পায়। আবহাওয়া জনিত কারণে ইউরোপে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষাবাদ সম্প্রসারণ করা যায়নি। পর্তুগীজ নাবিকরা ১৫৪৮ সালে প্রথম ভারতের কেরালা রাজ্যে আনারস নিয়ে আসেন। ভারতের আবহাওয়া আনারসকে চমৎকারভাবে মানিয়ে নেয়। খৃস্টান মিশনারীরা সপ্তদশ শতাব্দীতে কেরালা থেকে মেঘালয়ে আনারস নিয়ে যান। গারোপাহাড়ের ভাজে ভাজে শুরু হয় সফল আবাদ। গারোরা জুম চাষে আনারসকে সম্পৃক্ত করে।
১৯৪২ সালে মধুপুর উপজেলার ইদিলপুরের আদিবাসি গারো সনাতন মৃ মেঘালয়ের গাছোয়া থেকে প্রথম আনারস চারা নিয়ে আসেন। এভাবে ইদিলপুরের পাহাড়ি টিলায় আনারস আবাদ শুরু হয়। বর্তমানে মধুপুর ছাড়াও গড় এলাকার মুক্তাগাছা, ফুলবাড়িয়া ও ঘাটাইল উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার একরে আনারস আবাদ হয়। বাগান হতে ফল সংগ্রহের পর বিপুল পরিমান আনারস পাতা ও কান্ড বর্জ্য হিসাবে ফেলে দেয়া হয়। বস্তুত এটি কোনো কাজেই আসেনা। তবে এ ফলজাত বর্জ্যকে এখন আর ফেলনা মনে করা হয়না। প্রযুক্তিগত ব্যবহারের মাধ্যমে এ বর্জ্য এখন সম্পদে পরিণত হয়েছে। এর প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে নতুন পণ্যের উদ্ভাবন ও বিকাশ ঘটিয়ে দারিদ্র বিমোচন করা হচ্ছে।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ‘বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রিস’ সম্প্রতি ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন’ ও ‘শিল্প মন্ত্রণালয়’ এর আর্থিক সহায়তায় ‘বাংলাদেশ ইন্সস্পায়ার্ড’ নামক প্রকল্প তৃণমূল পর্যায়ে বাস্তবায়ন করছে। মধুপুর উপজেলার পাহাড়ি এলাকাকে এর ফোকাস পয়েন্ট হিসাবে বাছাই করা হয়েছে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো, আনারসের পাতা থেকে সংগৃহিত আঁশ প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাহারি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে নারীদের আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায়ন।
মধুপুর উপজেলার জলছত্র প্রকল্প কার্যালয়ের উৎপাদন কেন্দ্রের আওতায় ব্যুরো বাংলাদেশকে পার্টনার মর্যাদা দিয়ে পাঁচ শতাধিক বিত্তহীন নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মক্ষম করা হয়েছে। এসব নারীরা বাহারি হাত ব্যাগ, ভ্যানিটি ব্যাগ, গহনার বাক্স, ওয়াল ম্যাট, টিস্যু বক্স, কলমদানী, হ্যাটসহ বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় অলংকার তৈরি করছে। আনারস বর্জ্যরে প্রাকৃতিক আঁশ ও সূতা থেকে পরিবেশ সম্মত পোষাক ও হস্তশিল্প উৎপাদনের মাধ্যমে নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও শ্রীলঙ্কায় এ ধরনের প্রাকৃতিক আঁশ থেকে হস্তজাত শিল্প পণ্য উৎপাদনের নজির রয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আনারসের পাশাপাশি কলা গাছের বাকল ও প্রকল্পের কাঁচাপণ্য হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কারণ, মধুপুর গড়ে আনারসের পাশাপাশি প্রায় ১৫ হাজার একরে কলার বাণিজ্যিক আবাদ হয়। আনারস ও কলার বর্জ্য থেকে সুতা ও কাপড় তৈরির মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধি সম্ভব। আঁশ উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবে করা গেলে বিদেশ থেকে সূতা আমদানী হ্রাস পাবে। গামের্ন্টস খাতে নতুন পোষাক তৈরিতে অনুসঙ্গ হিসাবে কাজ করবে। এমনকি এসব বর্জ্য থেকে জৈবিক সার তৈরি করে রাসায়নিক সারের ব্যবহার হ্রাস করা যাবে।
প্রকল্পের মধুপুর ইউনিট ম্যানেজার এস, এম, আজাদ রহমান জানান, এটি শীঘ্রই সফল প্রকল্প হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। মধুপুর ছাড়াও নরসিংদী ও গাইবান্ধায় প্রায় দুই হাজার নারীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উৎপাদণ ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু হস্তশিল্প সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত ও বিপনণ সহজতর হলে পিছিয়ে পড়া নারীদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা যাবে।
মধুপুর এলাকার নারীদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করণের লক্ষ্যে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি মধুপুর উপজেলার জলছত্র এলাকায় পণ্য প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এ মেলায় হাজারো দশর্কের সমাগম ঘটে ।
কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম