মো. মোশারফ হোসেন, নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি:
জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিনা’র উদ্ভাবিত ধান
দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে, ফলশ্রুতিতে কমছে কৃষি জমির পরিমাণ। তাই বর্তমান সরকার ও মাননীয় কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর একান্ত লক্ষ্য- একই জমিতে বার বার বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা। এই লক্ষ্যে পৌঁছে সফলতা অর্জনের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিনা)।
বিনা রেডিয়েশন টেকনোলজির মাধ্যমে প্রতিনিয়ত স্বল্পজীবনীকাল সম্পন্ন ফসলের বিভিন্ন জাত উদ্ভাবন করে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত বিনা’র গবেষক ও বৈজ্ঞানিকগন ১৬ টি ফসলের ১০০ টি জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন। এইসব উদ্ভাবনের মধ্যে আসন্ন আমন আবাদে বিনা ধানের গুরুত্ব বেড়েছে; কৃষকদের কাছে হয়ে উঠেছে অধিক জনপ্রিয়।
বিনা উপকেন্দ্র নালিতাবাড়ী, শেরপুরের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসরীন আখতার জানান, চলতি আমন মৌসুমে শেরপুর জেলার ২৫০ থেকে ২৬০ কৃষকের মাঝে ৩ হাজার ১০০ কেজি বিনা জাতের ধানবীজ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বীজ প্রাপ্ত কৃষকের মাঝে সার সহায়তা ও বিনা ধানের সাইনবোর্ড প্রদান করা হবে। তিনি জানান, প্রতি একরের জন্য কৃষকদের ১২ কেজি করে বিনা ধান বীজ দেওয়া হয়েছে। সে হিসাব অনুযায়ী নালিতাবাড়ী বিনা উপকেন্দ্র সহায়তার আওতায় এবছর প্রায় জেলায় ২৬০ একর জমিতে বিনা জাতের আমন ধান চাষ হবে। আর ওইসব বিনা ধানের গড় জীবনীকাল ১০০ দিন হতে ১২০ দিন এবং প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন ৫ টন থেকে সাড়েছয় টন।
অন্যান্য আবাদের খরচের তুলনায় আমন আবাদে লাভ বেশি পাওয়ায় কৃষকরা বিনা ধান চাষে ঝুঁকছেন। এতে সেচ ও বালাইনাশক অপেক্ষাকৃত কম লাগে, তাই বিনা ধানের গুরুত্ব ও চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। তাছাড়া ভালো ফলন হওয়ায় কৃষক, কৃষি কর্মকর্তা ও বিনা’র কর্মকর্তারা বেশ খুশি। কম খরচে ও অল্প সময়ে অতিরিক্ত ফসল পেতে আমন আবাদে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিনা)’র উদ্ভাবিত বিনাধান-৭, বিনাধান-১১, বিনাধান-১৫, বিনাধান-১৬, বিনাধান-১৭, বিনাধান-২০ জাতের ৩ হাজার ১০০ কেজি বীজ শেরপুর জেলার কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করে নালিতাড়ীর বিনা উপকেন্দ্র। এইসব ধান ক্রমান্বয়েই কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিনাধানের জাত সম্প্রসারিত হওয়ায় আমন আবাদে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর বাড়ছে এই ধানের চাষি ও আবাদের পরিমাণ। কৃষকরা জানান, ধানের মৌসুমে বিনা ধান চাষ করে তারা প্রতিবছর অধিক লাভবান হচ্ছেন।
নালিতাবাড়ী বিনা উপকেন্দ্র অফিসের তথ্য মতে, চলতি আমন মৌসুমের জন্য একর প্রতি ১০ কেজি হিসাবে বিনাধান-৭’র বীজ ৫০০ কেজি, বিনাধান-১১’র বীজ একহাজার কেজি, বিনাধান-১৫’র বীজ ১০০ কেজি, বিনাধান-১৬’র বীজ ২০০ কেজি, বিনাধান-১৭’র বীজ এক হাজার ২০০ কেজি, বিনাধান-২০’র বীজ ১০০ কেজিসহ মোট ৩ হাজার ১০০ কেজি বিনা ধানের বীজ শেরপুর জেলার কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। তারমধ্যে নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলার কৃষকরা বেশি উপকৃত হয়েছেন। অনাকাঙ্খিত বন্যার পরবর্তীতে সমস্যা কাটিয়ে উঠার জন্য বিনাশাইল ধানের বীজ উপকেন্দ্রে মজুত আছে, যা পরবর্তীতে কৃষকদেরকে দেয়া হবে বলে জানান, নালিতাবাড়ী বিনা উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসরীন আখতার।
প্রতি মৌসুমের শুরুতে কৃষকের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিনা উদ্ভাবিত ফসলের চাষাবাদ পদ্ধতি, রোগ, পোকা দমন ও বীজ সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ইতোমধ্যে আমন চাষীদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। কৃষকদের মাঝে বিনা ফসল জনপ্রিয় করার উদ্দেশ্য নিয়মিত মাঠ দিবস করা হয়। যে সব কৃষকের মাঠে ফসল ভাল হয়, তাদের মাঠ ঘন ঘন মূল্যায়ন করে পরবর্তীতে সরকারী ক্রয়মূল্যে তাদের কাছ থেকে বীজ ক্রয় করে বিনা কর্তৃপক্ষ। এতে করে কৃষকরা অধিক লাভবান হওয়ায় অন্যান্য কৃষকরা বিনাধানসহ বিনা উদ্ভাবিত বিভিন্ন ফসলের চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।