মোঃ মোশারফ হোসেন, নকলা (শেরপুর) :
শখের বসে এ্যাকুরিয়াম
বাছির উদ্দিন পেশায় সার বীজ ব্যবসায়ী। এ ব্যবসার পাশাপাশি বাসায় চার বছর আগে শখের বসে মাত্র দুটি এ্যকুরিয়ামে মাছ চাষ শুরু করেন। ব্যবসায়ীক ব্যস্ততার জন্য তিনি সময় দিতে না পারলেও তার ছেলে রাসেল নিয়মিত পরিচর্যা করতেন। উন্নত শিক্ষার জন্য গত বছর রাসেল ময়মনসিংহে চলে যায়। পরে এ্যকুরিয়াম দুটি নকলা শহরের কাচারী মসজিদ রোডে নিজের দোকানে এনে স্থাপন করেন তিনি। তা দেখে অনেক শৌখিন মানুষ ওই গুলো কিনে নিতে আগ্রহী হয়। তাদের আগ্রহ ও চাহিদা বিবেচনায় বাছির উদ্দিন ময়মনসিংহ ও ঢাকা থেকে তৈরী করা কিছু এ্যকুরিয়াম ও বেশ কিছু মাছ বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে আসেন। সার ও বীজ ব্যবসার পাশাপাশি তিনি শুরু করেন এ্যকুরিয়াম ও রং-বেরংয়ের শৌখিন মাছের ব্যবসা। তারপর গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী এ্যকুরিয়াম তৈরী করার বিভিন্ন উপকরণ, মাছ ও মাছের খাদ্য বিক্রিতে বাধ্য হন বাছির।
সরজমিনে দেখা গেছে, বাছিরের কাছে প্লাটি, গোল্ড ফিস, গাপ্পী, টাইগার সার্ক, কৈকাপ, পমেটসহ নজর কাড়া বিভিন্ন রং ও জাতের মাছ রয়েছে। রয়েছে এ্যকুরিয়াম তৈরী করার নানা দামের বিভিন্ন উপকরণ ও মাছের খাদ্য। উপকরণ গুলোর মধ্যে কাচ, কাঠ, কচটেপ, গাম, পাত, পাথর, সৌন্দর্য বর্ধক বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্য, মনকাড়া বিভিন্ন ডিজাইনের অক্সিজেন মেশিন উল্লেখযোগ্য। তিনি সার-বীজ ব্যবসার পাশাপাশি এ্যকুরিয়াম, মাছ, এ্যকুরিয়াম তৈরী করার বিভিন্ন উপকরণ ও মাছের খাদ্য বিক্রি করে মাসে আন্তত ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা বাড়তি আয় করছেন। সে হিসাবে বছরে বাড়তি আয় হচ্ছে লক্ষাধিক টাকা।
বাছির উদ্দিনের দেখাদেখি আব্দুল হান্নানের ছেলে ও মেসার্স হৃদয় ফিসারিজ এন্ড এ্যকুরিয়ামের মালিক একেএম সুজন সরকার, মধ্যবাজারের আব্দুষ ছাত্তারের ছেলে ছাইদুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন শৌখিন মানুষ এ্যকুরিয়াম তৈরী, মাছ, এ্যকুরিয়াম তৈরী করার বিভিন্ন উপকরণ ও মাছের খাদ্য বিক্রি শুরু করে লাভবান হচ্ছেন।
সুজন জানায়, ১২ফুট ী ১৮ফুট মাপের একটি এ্যকুরিয়াম তৈরী খরচ এক হাজার টাকা। আর বিক্রি মূল্য ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১হাজার ৫০০ টাকা। সবচেয়ে ছোট একটি এ্যকুরিয়াম তৈরী করতে ব্যয় হয় ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা এবং বিক্রি করা হয় ৭০০ টাকা থেকে ৮০০ করে। তাছাড়া মাছ ও মাছের খাদ্য বিক্রি থেকে মাসে লাভ আসে অন্তত ৩ হাজার টাকা থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। অন্য এক এ্যকুরিয়াম ব্যবসায়ী শ্রমিকনেতা বাছির উদ্দিন জানান, শৌখিনরা বিভিন্ন জাতের মাছ পালন করলেও প্লাটি, গোল্ড ফিস, গাপ্পী, টাইগার সার্ক, কৈকাপ ও পমেট মাছের চাহিদা বেশি। তার দেয়া তথ্যমতে, প্রতিটি গোল্ড ফিস ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা করে, প্লাটি ও গাপ্পী প্রতিটি ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা করে, টাগার সার্ক প্রতি জোড়া ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা করে বিক্রি করা হয়। তাদের কিনা দাম একটু কম হলেও ঢাকা, ময়মনসিংহে যাতায়াত বাবদ ভাড়াটা ক্রেতাদের কাছে গড় করে রাখা হয়। তাতে ক্রেতা বা বিক্রেতার কারো ক্ষতি হয়না। আর মাছের খাবার বিক্রি হয় অতি নগণ্য। তা থেকে মাসে লাভ আসে ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা মাত্র। এ্যাকুরিয়াম ব্যবসায়ীরা বলেন, অন্যযেকোন ব্যবসার পাশাপাশি এই ব্যবসা চালানো সম্ভব। এতে আলাদা ভাবে বেশি সময় দিতে হয়না। তাই লাভ কম হলেও অন্য কোন ব্যবসার চেয়ে এটি সম্মান জনক হওয়ায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষিত সমাজ এই ব্যবসাতে আগ্রহী হচ্ছেন।
এবিষয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতানা লায়লা তাসনীম বলেন, শৌখিন যেকোন মানুষ বাড়িতে এ্যকুরিয়ামে মাছ পালনের পাশাপাশি ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা এই ব্যবসায় বাড়তি আয় করতে পারে। তাতে শিক্ষার্থীরা যে সময়টুকু বাহিরে অপচয় করে, তা কাজে লাগিয়ে নিজেই নিজের শিক্ষা খরচ চালাতে পারে। ফলে একদিকে শখ পুরণ হবে, অন্যদিকে আসবে টাকা।