কৃষির আধুনিকায়ন ও সাফল্যময় অগ্রযাত্রায় কৃষি সম্প্রসারণ বিজ্ঞান

কৃষির আধুনিকায়ন

কৃষির আধুনিকায়ন

মো. মাসুদ রানা
কৃষির আধুনিকায়ন ঃ কৃষিকাজ শুরুর ইতিহাস প্রাচীন। মানব সভ্যতার বিকাশের সাথে কৃষি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমির অর্থনীতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। চিরসবুজ আমাদের এই দেশটির সুপ্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে কৃষির সুনিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। সভ্যতার ক্রম বিকাশের সাথে সাথে দীর্ঘ পরিক্রমায় কৃষি বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে। আমাদের দেশের কৃষিখাতের সামগ্রিক উন্নয়নে ও কৃষকের আর্থসামাজিক অবস্থার মানোন্নয়নে আধুনিক সম্প্রসারণ বিজ্ঞানের ভূমিকা অপরিসীম।

চীনের ইউনিয়ন রাজত্বকাল থেকে শুরু করলে কৃষির সম্প্রসারণ বিজ্ঞানের ইতিহাস প্রায় চার হাজার বছরের পুরোনো। আধুনিক কৃষি সম্প্রসারণ বিজ্ঞান শুরু হয়েছিল ইউনিভার্সিটি ট্রিনিটি কলেজের এক্সটেনশন হিসেবে। ১৮৬৭ সালে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি ট্রিনিটি কলেজের ফেলো জেমস স্টুয়ার্ট প্রথম বললেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জিত জ্ঞান ও আবিষ্কৃত প্রযুক্তি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা। ক্রমে ইউনিভার্সিটি এক্সটেনশন এক আন্দোলনে পরিণত হলো। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি ১৮৭৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এক্সটেনশন এডুকেশন কথাটি গ্রহণ করে। আমেরিকায় এই কৃষি সম্প্রসারণ শুরু হয় ‘ল্যান্ড গ্রান্ড কলেজ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ক্রমে এটি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী।

“মানুষকে সাহায্য করো যাতে তারা নিজেরা নিজেদের সাহায্য করতে পারে এবং তাদের ব্যবহারে কাক্সিক্ষত পরিবর্তন বলতে মূলত জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি ও দক্ষতা বোঝায়।” নিজে করে শেখা এবং নিজের চোখে দেখে বিশ্বাস করা-এ নীতিই হলো কৃষি সম্প্রসারণের মূল ভিত্তি। দেশের কৃষিখাতের অভাবনীয় সাফল্য সম্ভব হয়েছে কৃষিতে গবেষণালব্ধ আধুনিক জ্ঞান ও উন্নত প্রযুক্তি কৃষকদের মাঝে হস্তান্তরের মাধ্যমে। স্বাধীনতার পরে যুদ্ধবিধস্ত আমাদের দেশের কৃষিখাতের সামগ্রিক উন্নতি ও সমৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাকৃবির সবুজ চত্বরে কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদায় উন্নীত করেন। যুগোপযুগী কৃষি সম্প্রসারণ নীতিমালা কৃষিখাতের সাফল্যের পেছনে অসামান্য ভূমিকা রেখে চলেছে। একসময় প্রতিটি ইউনিয়নে একজন সম্প্রসারণ কর্মী নিয়োগ দেওয়া হতো।

কৃষিতে সবুজ বিপ্লব এবং প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন কলাকৌশল আবিষ্কারের ফলে এসেছে আমূল পরিবর্তন। ফসলের নিবিড়তা, সেচকৃত এলাকা, পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রাদুর্ভাব এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় এনে প্রতিটি ইউনিয়নকে ২-৩টি ব্লকে বিভক্ত করা হয়। প্রতিটি ব্লকে একজন ব্লক সুপারভাইজার নিয়োজিত করা হয়। ব্লক সুপারভাইজারগণ সাব ব্লকে ঘুরে ঘুরে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান, প্রদর্শনী প্লট স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাজ করে থাকেন। ব্লক সুপারভাইজারগণ তাদের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে কাজ করেন। সম্প্রসারণ সেবা প্রদানে ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে গ্রুপ অ্যাপ্রোচ বা দলীয় আলোচনার উপরে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে কৃষিখাতের অন্যতম গুরত্বপূর্ণ প্রকল্প ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রজেক্টের (এনএনটিপি) আয়তায় ইউনিয়ন পর্যায়ে ফার্মার’স ইনফরমেশন এন্ড এডভাইজরি সেন্টার (এফআইএসি) স্থাপন করা হয়েছে। এখানে কৃষকরা চাষাবাদ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পেয়ে থাকেন। এছাড়া এনএটিপি প্রকল্পের আয়তায় কৃষকদের কমন ইন্টারেস্ট গ্রুপে (সিআইজি) প্রশিক্ষণ এবং বিনামূল্যে সার, বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া কৃষি কল সেন্টারে ১৬১২৩ নম্বরে যেকোনো অপারেটর থেকে ফোন করেও কৃষকরা কৃষি বিষয়ক যেকোনো সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পরামর্শ পেতে পারেন। সর্বোপরি বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের সময়োপযুগী পদক্ষেপের মাধ্যমে কৃষিখাতের সাফল্যময় অগ্রযাত্রা আগামী দিনগুলোতে আরও বেগবান হবে এবং বাংলাদেশ হয়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা এমনটাই প্রত্যাশা।

Advisory Editor

Advisory Editor of http://www.krishisongbad.com/

Learn More →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *