শাহ এমরানঃ
স্বপ্ন ডেইরী এন্ড ফিশারিজ
সফলতা এবং বিফলতা এই দুটো বাস্তবতা নিয়েই এবারের আমাদের দেশের ২০১৬ কোরবানীর বাজার শেষ হলো। দেশে যে এবার পর্যাপ্ত কোরবানীর পশু ছিল সে তথ্য “মিট এন্ড মিল্ক প্রোডিউসার্স এসোসিয়েসন” আগেই তুলে ধরেছিল সরকার, জনগন এবং খামার ব্যবসায়ী ভাইদের কাছে। এমত অবস্থায় সকল খামারী ভাইয়েরা সবাই খুব শংকিতই ছিল বটে শেষদিন পর্যন্ত কি হয় তা দেখার জন্য। ঈদের ২ দিন আগেও যারা বিক্রি করে দিয়েছেন তারা লাভবান হয়েছেন, আর যাদের শেষদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল তারা আশানুরূপ ফল পান নি। লাভ-লোকসান দুটোর বাস্তবতাই আছে এবার খুব স্পস্ট করেই। পার্শবর্তী দেশ থেকে খুব কমই গরু এসেছে এবার অতীতের তুলনায়। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশ সয়ংসম্পূর্নতা পেয়েছে কোরবানীতে দেশীয় পশুর যোগান দিতে। অনেক গরু এবার অবিক্রিত থেকে গেছে যা আমরা সবাই বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
খামারীরা চায় মুনাফা করতে, সরকার বা নীতি নির্ধারকরা চায় জনগনের হাতে কম মূল্যে খাদ্য তুলে দিতে। এই টানাপোড়ন থাকবেই, তবে নীতি নির্ধারকরা যেহেতু দেশ চালায় তাদের কোন পক্ষকেই খাটো করে দেখার উপায় নেই। পার্শবর্তী দেশ থেকে আমদানী করে জনগনের হাতে কম মূল্যে খাদ্য দ্রব্য তুলে দেবার থেকে যদি এই শিল্পের যথাযথ পরিকল্পনা কৌশল ঠিক করে দেশেই এর যোগানের ব্যবস্থা করা যায় তা যেমন সুদৃঢ করবে অর্থনৈতিক অবকাঠামো তেমনি ঘুচিয়ে আনবে আমাদের বেকার সমস্যা। আমদানী করে সাময়িক দ্রুত সমস্যার সমাধানের কথা চিন্তা না করে নীতি নির্ধারকদের সুদূর প্রসারী চিন্তাভাবনা করতে হবে। দেশের প্রতিটা জনগনকে বোঝা না বানিয়ে বরং তাদের কর্মক্ষম করে গড়ে তুলে জিডিপিতে এদের অবদান নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই একটা দেশ সামনের দিকে আগাতে থাকবে।
আমাদের মাংস এবং দুগ্ধ শিল্প বিকাশের অন্যতম প্রধান বাধা আমদানী নির্ভরতা। প্রতি বছর খামারীদের আতংকের মধ্যে থাকতে হয় এই কোরবানীর বাজার নিয়ে। না জানি পার্শবর্তী দেশ গরু চলে আসে, তখন কি হবে এই দুশ্চিন্তায় !!! আমাদের ভাবতে হবে ক্রেতা বিক্রেতা কেউ যেন না ঠকে যায়। এবারের কোরবানীতে দেশীয় গরুর পর্যাপ্ত যোগান এবং ভারত থেকে কম গরু আসা সত্তেও অনেক খামারীরা লাভবান হতে পারেনি, আবার অন্যদিকে অনেক ক্রেতাকে অতিরিক্ত মূল্য দিয়েই গরু কিনতে হয়েছে । তার অনেকগুলো কারনের মধ্যে উল্লেখ্যোগ্য হলো:
এই বছর কোরবানীর ৬-৮ মাস আগে খামারীরা লালন পালনের জন্য গরু কিনতে হয়েছিল বেশ চড়া দাম দিয়ে। যা গত বছরের তুলনায় ১৫%-২০% দাম বেশী ছিল। ২০১৫ তে লাভ হওয়াতে অনেক নতুন খামারী (বেকার জনগোষ্ঠী এবং প্রবাসী) যুক্ত হয়েছিল ২০১৬ তে, তাই বাজারে সেই সময় গরুর চাহিদা ছিল বেশী। এর ফলস্রুতিতে পরবর্তীতে গো-খাদ্যের দাম ছিল অত্যাধিক। সব মিলিয়ে গরু লালন পালনের খরচ গিয়েছিল বেড়ে। পাশাপাশি বর্তমান সার্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে জনগনের যথাযোগ্য আয় না বাড়াতে বড় গরুর থেকে ছোট এবং মাঝারী গরুর চাহিদাই বেশী ছিল।
আমাদের সরকার এবং নীতি নির্ধারকদের এই দিকটাতে ২০১৭ জন্য এবার নজর দিতে হবে। দুগ্ধ শিল্প আশার আলো না দেখাতে আমাদের দেশেই জন্মগ্রহন করা কোরবানীযোগ্য পশু এখনো পর্যাপ্ত নয়।আমদানী যদি করতেই হয় কোরবানীর সময় গরু আমদানী করে খামারীদের লোকসানে বোঝা তুলে না দিয়ে বরং ৮-১০ মাস আগে আমাদের কম মূল্যে, বিনা শুল্কে আমদানী করার সুযোগ করে দিন। গো-খাদ্যের দাম কি করে কমানো যায় এ ব্যাপারে কর্ম পরিকল্পনা, নীতি নির্ধারন এবং বিনা শুল্কে পশু খাদ্য আমদানীর সুযোগ করে দিন। এতে করে আমাদের দেশে খামার শিল্পের বিকাশ ঘটবে, বেকার সমস্যার সমাধান ঘটবে এবং আমদানী নির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানীর মাধ্যমেও মাংস শিল্পের বিকাশ ঘটবে।
জাত উন্নয়নের মাধ্যমে সরকার মাংস শিল্পের উন্নয়ন ঘটানোর চেস্টা করে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় উন্নত জাত ব্রাহমাকে লালন পালনের কাজ শুরু হয়ে গেছে। আশা করা যায় ২০২০ নাগাদ দেশের মাংস শিল্প নিজের দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে রপ্তানীর মাধ্যমে বিদেশের মাটিতেও ছড়িয়ে যাবে। এই সকল পরিকল্পনা সঠিক বাস্তবায়ন হবে যদি আমরা আমদানী পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে পারি, অন্যথায় দুগ্ধ শিল্পের মতই সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সরকারের বর্তমান সকল পরিকল্পনা ও ব্যার্থ হবে। একজন খামারীই যদি না বাঁচে, এই সকল পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হবে কি করে!!!
কৃষির আরো খবর জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিনঃকৃষিসংবাদ.কম