গুণেমানে অনন্য ৩ লাখ টাকার ইন্দোনেশিয়ান মুরগী আয়াম সেমানি

ইন্দোনেশিয়ান মুরগী আয়াম সেমানি
ইন্দোনেশিয়ান মুরগী আয়াম সেমানি


কৃষিবিদ ডা. মোঃ সিরাজুল ইসলাম
ইন্দোনেশিয়ান মুরগী আয়াম সেমানি ঃ ‘আয়াম সেমানি’ একটি মুরগির জাতের নাম। এ মুরগি শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়াতেই পাওয়া যায়। বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে। ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় ভাষায় ‘আয়াম’ শব্দের অর্থ হলো মুরগি। আর ‘সেমানি’ শব্দের অর্থ হলো কালো। আয়াম সেমানি একেবারে কালো মুরগি। এর গোটা শরীর কালো। বলা যায় মেঘ কালো, কৃষ্ণ কালো, আঁধার কালো অর্থাৎ এর চেয়ে আর কালো হতে পারে না। এ মুরগির পালক কালো, চামড়া কালো, ঠোঁট কালো, নক, ঝুঁটি, মুখ, জিভ ও শরীরের ভেতরের মাংস কালো। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এমনকি এদের হাড়ও কালো। একেবারে কুঁচকুচে কালো। তবে রক্ত গাঢ় লাল। দেখে মনে হয় কালচে লাল বা খয়েরি ধাঁচের লাল। ডিম দেয় গাঢ় কালো রংয়ের। দেখে মনে হয় বাদামি ধাঁচের রংয়ের।

ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে এই মুরগির আদি আবাসস্থল। পরবর্তীকালে হল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভিকিয়াতে হাইব্রিড হিসেবে এই ধরনের মুরগি পালন করা হয়। ভারতে আয়াম সেমানির হাইব্রিড জাত জন্ম দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে মধ্য প্রদেশে এর হাইব্রিডের প্রচলন বেশি। ভারতে তাদের নাম কাদাকনাথ। ইন্দোনেশিয়ার জাভায় বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে জেনেছেন- আয়াম সিমানি মুরগিকে নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার সাধারণ মানুষের মাঝে অনেক গল্প প্রচলিত আছে। তারা বিশ্বাস করেন এই মুরগি সৌভাগ্যের প্রতিক। এই মুরগি সৌভাগ্য এনে দেয় জীবনে। ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় লোকের বিশ্বাস এই মুরগিতে এত বেশি আয়রন থাকে, যা পৃথিবীতে অন্য কোন মুরগিতে পাওয়া যাবে না। এ ছাড়া গর্ভবতী নারীরা এর মাংস খেলে, সে সুস্থ্য-সামর্থ থাকবে। সুস্থভাবে সন্তানের জন্ম দিতে পারবে এবং তাতে তার সন্তানও বুদ্ধিমান এবং শক্তিমান হবে। পুরুষেরা খেলে, স্নায়ুবিক দুর্বলতা দূর হবে ও যৌন শক্তিতে বলিয়মান থাকবে।

আয়াম সিমানি কেন এত মূল্যবান ও আকর্ষনীয়
মাংস ও রক্ত ঃ এই মুরগির ঔষধি গুণ; অদ্বিতীয় বিশেষ করে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় ও শরীরের স্নায়ুর আকর্ষনীয়তায় উক্ত মুরগির মাংসের কার্যকারীতা বিস্মনীয়। ভারতের মধ্য প্রদেশের উপজাতীয় সম্প্রদায়ের লোকের এই মুরগির রক্ত মানুষের পুরাতন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করেন এবং এদের মাংস কামোদ্বীপক রক্ত হিসাবে ব্যবহার করেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভায়াগ্রা বা সিলডেনফিল যা মূলত: মানব দেহের হৃদপিন্ডে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে ভ্যাসোডিলেটর হিসাবে কাজ করে। আয়াম সিমানি শরীরে ম্যালালিন পিগম্যান্ট মানব দেহের মতোই কার্যকর। এর মাংস নারীরোগ চিকিৎসায়ও অদ্বিতীয় কার্যকরী ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে নারীর গর্ভপাত ও বন্ধ্যাত্ব জনিত রোগে চমৎকার কার্যকরী।
আয়াম সিমানির ডিম ঃ আয়াম সেমানি মুরগির ডিম রোগের চিকিৎসায় বিষ্ময়কর অবদান রেখে চলেছে। যেসব বৃদ্ধ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন, তাদের জন্য এই মুরগির ডিম খুবই পষ্টিকর এবং উপকারী খাদ্য। এই ডিমে যৎসামান্য পরিমাণে চর্বি ও ক্লোরেস্টরল থাকে। তবে পর্যাপ্ত পরিমান এমাইনো এসিড আছে, যা অন্যান্য পাখির ডিমের চেয়ে বেশি। এই ডিম মারাত্মক মাথা ব্যাথা রোগ দূর করতে পারে। বিশেষ করে মহিলাদের প্রসব পরবর্তী মাথা ব্যাথা, দুর্বল চিত্তের রোগী, হাঁপানী রোগী ও নেফ্রাইটিস অর্থাৎ তীব্র প্রকৃতির কিডনি ব্যাথা, তথা নতুন ও পুরাতন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

মাংসের উপকারিতা ঃ আয়াম সিমানি মুরগির মাংসে উচ্চ মাত্রার পুষ্টিগুণ ও অন্যান্য দেশীয় মুরগি থেকে এই মাংসে বেশি পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। এর গুণাগুণ সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো।
∎শতকরা ২৫ভাগ আমিষ থাকে, যা অন্য যে কোন পাখির মাংস থেকে বেশি। ∎ যৎসামান্য পরিমাণে চর্বি ০.৭৩ থাকে ১.০৫ মিলিগ্রাম মাত্র। যা অন্যান্য যে কোন পাখির মাংস থেকে অনেক কম পরিমাণে থাকে। ∎ এই মুরগির মাংসে ভিটামিন- বি১, ভিটামিন- বি২ ভিটামিন- ডি৬, ভিটামিন- বি১২, ভিটামিন- সি, ভিটামিন- ই, নায়াসিন, প্রোটিন, ফ্যাট, ক্যাসলিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, নিকোটিনিক এসিড ইত্যাদি অন্যান্য পাখির মাংসের তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। ∎ উচ্চ মাত্রার ১৮টি অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিড, যার মধ্যে ৮টি সংকটপন্ন এমাইনোএসিডসহ গুরুত্বপূর্ণ হরমোন রয়েছে, যা মানব দেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। ∎ ভারতের কেন্দ্রিয় খাদ্য ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, মহিসুর ভারত তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে এই মুরগির মাংস হৃদরোগীদের উপযোগী, কারণ- এই মাংস ভক্ষনের ফলে হৃদয়যন্ত্রের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। গবেষণা পত্রে বলা হয়েছে- It’s medicinal qualities and determined that it is suitable for cardiac patients as it increases blood supply to the honest.

সরকারী পর্যায়ে এখনও কোন খামারে আয়াম সেমানি নিয়ে কাজ হচ্ছে না। তবে, ব্যক্তি উদ্যোগ পর্যায়ে ভারত থেকে আনা কেদাকনাথ হাইব্রীড প্রতিপালন ও বিক্রয় করা হচ্ছে। এরাও গুনেমানে ভালো মুরগি। সরকারী পর্যায়ে এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ও কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহে আয়াম সিমানি নিয়ে কাজ হওয়া আবশ্যক।

লেখকঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা, কৃষিবিদ, গীতিকার, ছড়াকার ও লেখক,
বাজিতপুর বাজার, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *