(পুর্ব প্রকাশের পর)
টার্কি পালন করে আপনিও আয় করতে পারেন
ডিম উৎপাদন: সাধারণত ৩০ সপ্তাহ বয়স থেকে টার্কি ডিম পাড়া শুরু করে এবং পরর্বতী ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত একটানা ডিম দেয়। প্রায় ৭০% টার্কি বিকাল বেলায় ডিম পাড়ে। এদের ডিমের এক প্রান্ত সরু এবং শক্ত খোলসে আবৃত। টার্কির ডিমে প্রায় ১৩.১% প্রোটিন, ১১.৪% লিপিড, ১.৭% কার্বোহাইড্রেট, ০.৪% মিনারেল এবং প্রতি গ্রাম কুসুমে প্রায় ১৫.৬৭ হতে ২৩.৯৭ মিগ্রা কোলেস্টেরল বিদ্যমান।
মাংস উৎপাদন: নানাবিধ কারণে টার্কির মাংস সাধারণভাবে ভোক্তার কাছে ব্যাপক গ্রহনযোগ্য অর্জন করেছে। টার্কির মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অন্যান্য পোল্ট্রির চেয়ে বেশী। এক গবেষণায় দেখা গেছে ৪ আউন্স ওজনের টার্কির মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ ৩৪ গ্রাম। এছাড়া ও মাংসে ভিটামিন বি ১, বি ২, বি৫, বি৬ এবং বি ১২ যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে। এতে ওমেগা ৬ এবং ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিডের পরিমোণ ও অধিক রয়েছে। টার্কির মাংস প্রায় ২৪% আমিষ, ৬.৬% ফ্যাট এবং প্রতি ১০০ কেজি মাংসে ১৬২ ক্যালরি শক্তি বিদ্যমান। তদুপরি এ মাংসে প্রচুর পরিমাণে সেলেনিয়াম রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে জিংক, কপার, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং আরও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। টার্কি মাংসে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ একবারেই কম রয়েছে। এ সমস্ত বৈশিস্ট্যের কারণে মানব স্বাস্থ্যের জন্য টার্কির মাংস অত্যন্ত উপযোগী বলে চিহ্নিত হয়েছে। এছাড়া ও টার্কি তৃণভোজী পাখি হওয়ায় এর মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু বলে বিবেচিত হয়েছে।
টার্কি পালন পদ্ধতি: টার্কি পালন মুক্ত এবং আবদ্ধ উভয় অবস্থাতেই করা যায়।
ক) মুক্ত অবস্থায় পালন: মুক্ত চারণ পদ্বতিতে এক একর জায়গাতে ২০০-২৫০ টি প্রাপ্ত বয়স্ক টার্কি পালন করা যায়। প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্ক টার্কির জন্য কমপক্ষে ৩-৪ বর্গফুট জায়গা দরকার। চরে খাওয়ার সময় শিকারী জীবজন্তুর হাত থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে। বাসস্থান ঠান্ডা রাখার জন্য গাছ লাগাতে হবে। চারণভূমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করতে হবে যার ফলে পরজীবী সংক্রমণের ঘটনা কম হতে সাহায্য করে।
উপকারিতা: ৫০% খাদ্য খরচ কম হয়। স্বল্প বিনিয়োগের দরকার হয়। খরচের তুলনায় লাভের হার বেশী।
মুক্ত অবস্থায় খাবার: টার্কি খুব ভালভাবে আর্বজনা খুটেঁ খায় বলে এরা কেঁচো, ছোট পোকামাকড়, শামুক,রান্নাঘরের বর্জ্য ও ইউপোকা খেতে পারে, যাতে প্রচুর প্রোটিন আছে যা খাবারের খরচকে ৫০ ভাগ কমিয়ে দেয়। এছাড়া শিম জাতীয় পশুখাদ্য যেমন লুর্সান, স্টাইলো ইত্যাদি খাওয়ানো যায়। চরে বেড়ানো পাখীদের পায়ের দুর্বলতা ও খোঁড়া হওয়া আটকাতে খাবারে ঝিনুকের খোসা মিশিয়ে সপ্তাহে ২৫০ গ্রাম হিসাবে ক্যালসিয়াম দিতে হবে। খাবারের খরচ কম করার জন্য শাকসবজির বর্জ্য অংশ দিয়ে খাবারের দশ শতাংশ পরিমাণ পূরণ করা যেতে পারে।
স্বাস্থ্য রক্ষা: মুক্ত চারণ ব্যবস্থায় পালিত টার্কির অভ্যন্তরীণ (গোলকৃমি) ও বাহ্য (ফাউল মাইট) পরজীবী সংক্রমণের সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশী। তাই পাখীদের ভাল বিকাশের জন্য মাসে একবার Deworming ও Diping করা দরকার।
খ) আবদ্ধ অবস্থায় পালন: আবদ্ধ পদ্বতিতে টার্কি পালনে রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, শিকারী প্রাণী থেকে সহজেই রক্ষা করা যায়। দেশের অপেক্ষাকৃত গরম এলাকায় ঘরগুলি লম্বালম্বি পূর্ব থেকে পশ্চিমে রাখতে হবে। অল্প বয়স্ক টার্কির ক্ষেএে পরস্পর ২টি বাসস্থানের দূরত্ব কমপক্ষে ২০ মিটার ব্যবধানে এবং প্রাপ্ত বয়স্ক টার্কির জন্য ৫০-১০০ মিটার ব্যবধান রাখতে হবে। খোলা ঘরের প্রস্থ ৯ মিটারের বেশি হওয়া চলবে না। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত ঘরের উচ্চতা ২.৬ থেকে ৩.৩ মিটারের মধ্যে থাকতে পারে। বৃষ্টির ঝাপটা আটকাতে ঘরের চালা ১ মিটার বাড়িয়ে রাখতে হবে। ঘরের মেঝে সস্তা, টেকসই ও নিরাপদ ও আর্দ্রতারোধক বস্তু যেমন কংক্রিটের হওয়া উচিত। একটি টার্কির জন্য মেঝে, খাবার এবং পানির জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা নিচে দেওয়া হল:
বয়স মেঝে (বর্গফুট) খাদ্য পাত্র (সেমি) পানির পাত্র (সেমি)
০-৪ সপ্তাহ ১.২৫ ২.৫ ১.৫
৫-১৬ সপ্তাহ ২.৫ ৫.০ ২.৫
১৬-১৯ সপ্তাহ ৪.০ ৬.৫ ২.৫
প্রজনন টার্কি ৫.০ ৭.৫ ২.৫
লিটার ব্যবস্থাপনা: টার্কির লিটার হিসেবে সহজলভ্য দ্রব্যাদি ব্যবহার করতে হবে। যেমন (ক) কাঠের ছোবড়া (খ) কাঠোর গুড়াঁ (গ) ধানের কুড়া (ঘ) বালি ইত্যাদি। শুরুতে ২ ইঞ্চি পুরু লিটার তৈরি করতে হয় এবং ধীরে ধীরে আরো লিটার যোগ করে ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত করা যেতে পারে। লিটার সবসময় শুকনা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ভেজা অংশ তুলে ফেলে পুনরায় শুকনা লিটার যোগ করতে হবে।
খাবার: টার্কির খাবার সরবরাহের জন্য ২ টি পদ্বতি ব্যবহার করা হয়। যেমন ম্যাশ ফিডিং ও পিলেট ফিডিং।
# টার্কির খাবারে শক্তি,আমিষ, ভিটামিন ও মিনারেল অন্যান্য পাখির তুলনায় বেশি লাগে।
# পুরুষ ও স্ত্রী টার্কির রেশনে আলাদা আলাদাভাবে তৈরি করতে হয়।
# মাটিতে খাবার সংগ্রহ বা সরবরাহ করা যাবে না।
# রেশন ধীরে ধীরে পরির্বতন করতে হয়।
# সব সময় অবিরাম পরিষ্কার পানি সরবরাহ করতে হবে।
# গ্রীষ্মকালে পানির সাথে স্যালাইন বা গ্লুকোজ দিতে হবে।
# গ্রীষ্মকালে দিনের অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা সময়ে টার্কিদের খাবার দিতে হবে।
# পায়ের দূর্বলতা এড়াতে দিনে ৩০-৪০ গ্রাম হারে ঝিনুকের গুড়ো দিতে হবে।
সবুজ খাদ্য: নিবিড় পদ্বতিতে হিসাবে মোট খাদ্যের ৫০ ভাগ পর্যন্ত সবুজ খাবার দেওয়া যায়। সব বয়সের টার্কির জন্য টাটকা লুর্সান প্রথম শ্রেনীর সবুজ খাদ্য । এছাড়া খাবারের খরচ কম রাখার জন্য কচুরি পানা,কলমি শাক,সবুজ ঘাস কুচি করে টার্কিদের খাওয়ানো যেতে পারে।
দানাদার খাবার: টার্কির একটি আদর্শ খাদ্য তালিকা নিচে দেওয়া হল:
খাদ্য উপাদান শতকরা হার
ধান ২০%
গম ২০%
ভূট্টা ২৫%
সযাবিন মিল ১০%
ঘাসের বীজ ৮%
সূর্যমুখীর বীজ ১০%
ঝিনুক গুড়া ৭%
মোট ১০০%
………………….
ফার্মের ঠিকানাঃ
গ্রামঃ সাহাবাজ, ডাকঃ বামনডাঙ্গা
উপজেলাঃ সুন্দরগঞ্জ, জেলাঃ গাইবান্ধা।
মোবাইলঃ ০১৭১৮৫৪২০০৬,
ইমেইলঃ shazedul09@gmail.com