মোঃ মোশারফ হোসেন, নকলা (শেরপুর) :
নামে মাত্র শ্রমে ও উৎপাদন খরচ কমে, ফলন বেশি হওয়ায় শেরপুরের নকলা উপজেলার উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে বেলে বা বেলে-দোআঁশ যুক্ত পতিত জমিতে মুখি কচু চাষ করে কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। খরচের তুলনায় কয়েক গুণলাভ পাওয়ায় এজাতের সবজি ফসল চাষে কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। তাতে নকলা উপজেলায় কচুর আবাদ দ্বিগুণ হারে বাড়ছে।
বিভিন্ন জাতের কচুমুখির মধ্যে সাধারণত মৌখিক, লতিরাজ, মান ও জাতি কচু বেশি চাষ করা হলেও নকলায় মৌখিক কচুর প্রভাব লক্ষ্য করার মতো। প্রায় তিনগুণ লাভের মুখি কচুর চাষ গেল বছরের তুলনায় চলতি বছর প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। গেল বছর চাষ হয়েছিলো মাত্র ৭০ হেক্টর, আর এবছর তা বেড়ে প্রায় দেড়শ হেক্টরে উন্নিত হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
উপজেলার বানেশ্বরদী, টালকী, পাঠাকাটা, চন্দ্রকোণা, চরঅষ্টধর, নকলা ও গনপদ্দি ইউনিয়নসহ পৌরসভার ধুকুড়িয়া, লাভা, গড়ের গাঁও এলাকার জমি অপেক্ষাকৃত উঁচু এবং মাটি দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ থাকায় ওই সব এলাকায় কচুমুখি বেশি চাষ করা হয়। বানেশ্বরদী ইউনিয়নের ভূরদী এলাকার ছাইয়েদুল হক, মকুল, আমীর আলী, ইব্রাহীম, ছমেদ আলী, ছাইফুল, জবেদ আলী; পাঠাকাটার ইয়াকুব আলী, ফয়েজ উদ্দিন; চন্দ্রকোণার মোকসেদ আলী, মোক্তার আলী, জাফর আলী; নকলা এলাকার মোশারফ, কব্দুল, লিটন মিয়া; ধুকুড়িয়ার হাফেজ উদ্দিন, হাসেম, নজরুল, ইসলাম, মধ্য লাভার শহিদুল ও পূর্ব লাভার শাহাদত ও আক্তারসহ অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ধানসহ অন যেকোন ফসল চাষে উৎপাদন খরচের তুলনায় ব্যয় অনেক বেশি হওয়ায় লাভ কম থাকে। কিন্তু মুখি কচুতে খরচের তুলনায় লাভ কয়েকগুণ বেশি হয়। তাই তারা দিন দিন কচু চাষের পরিমাণ বাড়াচ্ছেন। তাদের দেখাদেখি অন্যান্য এলাকার কৃষকরা কচুমুখি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। শাহাদত জানান, প্রতি বিঘাতে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে অন্তত ৫৫ মণ থেকে ৬৫ মণ মুখি পাওয়া যায়। যার বাজার মূল্য ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা। এতে বিঘা প্রতি ৪০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা লাভ থাকে। সে হিসাব মতে দুই-তিন বিঘা জমিতে কচুমুখি চাষ করে চার মাসেই লাখপতি হওয়া সম্ভব।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, সাধারণত চৈত্র ও বৈশাখ মাসে মুখির বীজ লাগাতে হয়। প্রতি বিঘাতে ৮০ থেকে ১০০ কেজি. বীজ লাগে। উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে বেলে, বেলে-দোআঁশ মাটিতে বিশেষ করে পতিত জমিতে কচুমুখি চাষ করে কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। আর তাইতো কেউ কেউ কচুমুখিকে সাদা সোনা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তিনি আরও বলেন, কচুমুখির আবাদ বৃদ্ধি করতে কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।