পুষ্টিগুণে ভরা আনারস, চাষ করা যায় বারো মাস

পুষ্টিগুণে ভরা আনারস

পুষ্টিগুণে ভরা আনারস
কৃষিবিদ ড. এম এ মজিদ মন্ডল
পুষ্টিগুণে ভরা আনারস ঃ বিশ্বে বানিজ্যিক ফলসমুহের মধ্যে আনারস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফল। বাংলাদেশে সৌন্দর্যের জন্য এ ফলকে “স্বর্ণকুমারী” বলে অ্যাখায়িত করা হয়। আকর্ষণীয় সুগন্দ্বে ও মধুর স্বাদের জন্য এ ফল সকলের নিকট সমাদৃত। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৫-২০ হাজার হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয় এবং প্রায় ১৫০-২০০ হাজার মেট্রিক টন ফল উৎপাদন হয়। প্রতি বছর আনারস চাষী ও ব্যবসায়িরা ব্যাপক পরিমান ক্ষতির শিকার হয় (১) সঠিক পরিচর্যার অভাব ও রোগ-পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয়ে এবং (২) ফল পাকার সময় সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাত করণ, পরিবহন ও বাজারজাত করনের সময়। তাই আমাদের কৃষক ভাই এবং কৃষি বিজ্ঞান বিষয়ের ছাএদের জন্য উক্ত সমস্যা সমাধান আলোচনা করা হলো ঃ
আনারস ইংরেজি নাম :  Pineapple বৈজ্ঞানিক নাম : Ananus comosus জাত : হানিকুইন, জায়ান্ট, ঘোড়াশাল ও জলঢুপি। পুষ্টিগুণ : ভিটামিন-সি, ক্যারোটিন ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। পুষ্টি উপাদান (প্রতি ১০০ গ্রামে/ উপাদান পরিমাণ) জলীয় অংশ ৯২.৪ (গ্রাম), মোট খনিজ পদার্থ ০.৭ (গ্রাম), হজমযোগ্য আঁশ (গ্রাম) – খাদ্যশক্তি ৩০ (কিলোক্যালরি), আমিষ ০.৯ (গ্রাম), চর্বি ০.২ (গ্রাম), শর্করা ৬.২ (গ্রাম), ক্যালসিয়াম ১৮ (মিলিগ্রাম), ক্যারোটিন ১৮৩০ (মাইক্রোগ্রাম), ভিটামিন-বি১ ০.১১ (মিলিগ্রাম), ভিটামিন-বি২ ০.০৪ (মিলিগ্রাম), ভিটামিন-সি ২১ (মিলিগ্রাম); ঔষধিগুণ : পাকা ফল বল বৃদ্ধি করে, কফপিত্ত বর্ধক, পাচক ও ঘর্মকারক। কাঁচা ফল গর্ভপাতকারী। পাকা ফলের সদ্য রসে ব্রোমিলিনজাতীয় একপ্রকার জারক রস থাকে বলে এটি পরিপাক ক্রিয়ায় সহায়ক হয়। কচিফলের রস ও পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে পান করলে কৃমির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। উৎপাদন এলাকা : সিলেট, মৌলভীবাজার, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, চট্টগাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় আনারস ভালো হয়। ব্যবহার : পাকা আনারস পুষ্টিকর ফল হিসাবে খাওয়া হয় এবং কাঁচা আনারস মুখরোচক তরকারি রান্নায় ব্যবহার হয়।
আনারসের রোগ বালাই দমনে করণীয়
(অ) রোগ দমন ঃ
ফল পচা ( Fruit rot) ঃ আনারসের জন্য এ রোগ খুবই মারাত্তক। সেরাটোসাইটিস প্যারাডোসা (Ceratocystis paradoxa) নামক এক প্রকার ছএাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগের কারনে উৎপাদন শুন্যের কাছাকাছি আসতে পারে।
রোগের লক্ষণসমুহ ঃ (ক) ফলের উপর পানি ভেজা দাগ পড়ে পরে উহা হলুদ হয়ে গাঢ় বাদামী ও কালর্চে রং ধারন করে। (খ) আক্রান্ত অংশের টিসু (কোষসমুহ) নরম হয়ে পচে যায়। (গ) পাকা ফল আক্রান্ত হলে একটি বৈশিষ্টপূর্ণ গন্ধ পাওয়া যায়। (ঘ) পাতা আক্রান্ত হলে সম্পূনর্ণ গাছ কাল হয়ে পছে যায়।
দমন ব্যবস্থা ঃ (১) বাগান পরিস্কার রাখতে হবে। (২) রোপন দ্রব্য রোগ প্রতিরোধী জাতের সাকার ব্যবহার করতে হবে। (৩) রোপনের পূবে সাকার দুই ঘন্টা হালকা রোদে শুকে নিলে এ রোগের সম্ভবনা কম থাকে। (৪) সংগ্রহকৃত আনারস প্যাকিং এর পূর্বে ঝুড়িকে জীবানু মুক্ত করতে হবে। (৫) ফলের কর্তিত গোড়ায় ১০ % বেনজোইক এসিড দ্রবনে ডুবিয়ে নিতে হবে।

কান্ড পচা (Stem rot)ঃ এ রোগ ফাইটোপথোরা প্যারাসাইটিকা (Phytophthora parasitia) নামক এক প্রকার ছএাক দ্বারা হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণসমুহ ঃ (ক) প্রথমে পাতা হলুদ ও পরে বাদামী হয়ে যায়। (খ) কান্ডরে গোড়ার অংশ ও মুল কাল বর্ণ ধারণ করে পচতে করে। (গ) এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ গাছ মরে যায়।

দমন ব্যবস্থা ঃ (১) বাগান পরিস্কার পরিছন্ন রাখতে হবে । (২) রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করতে হবে। (৩) বাগানে যেন পানি না জমে সে ব্যবস্থা করতে হবে। (৪) রোগ প্রতিরোধের জন্য রোপনের পূবে ৪ ঃ ৪ ঃ ৫০ অনুপাতে বোর্দোমিক্্রচার দ্রবনে চারা ডুবিয়ে নিতে হবে।

(আ) পোকা-মাকড় দমন ঃ
ছাতরা পোকা বা মিলিবাগ ঃ (ক) এ পোকা গাছের পাতা, কান্ড, ফল প্রভৃতি থেকে রস চুষে খেয়ে সেখানে ক্ষত সৃষ্টি করে। (খ) মুল বা কান্ড ও মুলের সংযোগস্থলে আক্রমণ হলে গাছ নেতিয়ে পড়ে। (গ) ফল আক্রান্ত হলে পচে যায়। (ঘ) আক্রান্ত স্থান দিয়ে ভাইরাস প্রবেশ করে অ্যানাসা উইল্ট রোগ সৃষ্টি করে।

দমন ব্যবস্থা ঃ (১) রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করতে হবে ( যেমন- কুইন, পানামবুকো, স্প্যানীশ প্রভৃতি)। (২) ফল সংগ্রহ করার পর শুকনো লতাপাতা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। (৩) ম্যাথিয়ন-৫৭ ইসি ৮ সিসি ২.৫ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

লেখক ঃ ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও আঞ্চলকি প্রধান, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান), রাজশাহী বিভাগীয় আঞ্চলিক কেন্দ্র, সিরাজগঞ্জ।

Advisory Editor

Advisory Editor of http://www.krishisongbad.com/

Learn More →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *