বাংলাদেশে প্রথম সুপারি ও নারিকেল গাছে ক্ষতিকারক ব্যাগওয়ার্ম মথ সনাক্ত

ব্যাগওয়ার্ম মথ সনাক্ত

ব্যাগওয়ার্ম মথ সনাক্তঃ


মোঃ ইমরুল কায়েস,পবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলায় সুপারি ও নারিকেল গাছে মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রজাতির ব্যাগওয়ার্ম মথ সনাক্ত করেছেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। বিশ্ববিদ্যালয়টির কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান ও অধ্যাপক ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান এর নেতৃত্বাধীন একদল গবেষক নতুন প্রজাতির ক্ষতিকারক মথ নিয়ে গবেষণা করেন। এ সংক্রান্ত তাঁদের গবেষণাপত্রটি আর্ন্তজাতিক বৈজ্ঞানিক সাময়িকী “ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইনোভেটিভ রিসার্চ ” এ ২০১৯ সালের এপ্রিল ইস্যুতে প্রকাশিত হয়েছে।


গবেষণাপত্র থেকে জানা যায় লেপিডোপটেরা বর্গের সিকিডি পরিবারে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩৫০টি প্রজাতির ক্ষতিকারক ব্যাগওয়ার্ম মথ সনাক্ত করা হয়েছে। যাদের মধ্যে মাহাসিনা করবেটি (Mahasena corbetti) নামক প্রজাতির ব্যাগওয়ার্ম মথ মারাত্মক ক্ষতিকারক। এ প্রজাতির পোকা শুধুমাত্র অর্থকরী ফসল যেমন সুপারি, নারিকেল কিংবা পামজাতীয় অন্যান্য গাছের সকল পাতা ভক্ষণ করে না সেই সাথে সৌন্দর্য্যবর্ধনকারী গাছ মেহেদি ও ড্্রসিনার পাতাও ভক্ষণ করে গাছকে পল্লবহীন করে মেরে ফেলে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশসহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় কিছু দ্বীপে এই প্রজাতির পোকার সন্ধান মিললেও বাংলাদেশে ইতোপূর্বে এই প্রজাতির পোকার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। পূর্বে মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, থাইল্যান্ড, ফিলিপিন, সুমাত্রা, জাবা, ব্রুনাই, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও পাপোয়া নিউগিনি থেকে এ প্রজাতির পোকা সনাক্ত হলেও ২০১৫-১৬ সালে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মেঘালয় প্রদেশের পূর্ব পাহাড়িয় খাশি জেলায় সুপারি গাছে প্রথম এ প্রজাতির পোকা সনাক্ত হয় যা ২০১৮ সালের বৈজ্ঞানিক সাময়িকী “ফাইটোপ্যারাসাইটিকায়” প্রকাশ পায়।
বাংলাদেশে সুপারি ও নারিকেল গাছে ক্ষতিকারক প্রজাতির ব্যাগওয়ার্ম মথ সনাক্তকরণ ও তার অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে গবেষণা প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশে ২০১৮ সালে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খামারের সুপারি গাছে সর্বপ্রথম এ প্রজাতির ব্যাগওয়ার্ম দৃষ্টিগোচর হলে তা সংগ্রহ করে গবেষণাগারে লালন-পালন করে তার পূর্ণাঙ্গ জীবনচক্র দেখা হয়। কারণ মুক্তাবস্থায় পূর্ণাঙ্গ মথ খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন এবং প্রজাতি সনাক্তকরণে পূর্ণাঙ্গ পুরুষ মথ প্রয়োজন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গবেষকবৃন্দ নিশ্চিত হয় যে এটা মাহাসিনা করবেটি (Mahasena corbetti) নামক প্রজাতির একটি মারাত্মক ক্ষতিকারক ব্যাগওয়ার্ম। গবেষণা চলাকালীন সময়ে গবেষকবৃন্দ এ প্রজাতির পোকার উপস্থিতি নারিকেল, মেহেদি ও ড্রসিনা গাছেও লক্ষ্য করেন। এ পোকার হোস্টপ্লান্টের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পোকায় আক্রমনে গাছের এক থেকে দুই তৃতীয়াংশ পাতা খেয়ে ফেলার কারণে কখনো বা পুরো গাছটিই শুকিয়ে মারা যায়। পরিসংখ্যানে দেখা যায় এ পোকার আক্রমনে ৪০-৫০% ফলন নষ্ট হয়ে যায় যা অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতি।”


কীভাবে এ পোকা দমন করা যায় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ পোকা দমন করতে হলে সূচনালগ্নেই সিস্টেমিক কীটনাশক প্রয়োগ করে লার্ভা এবং সঠিক ফেরোমন/আলো ফাঁদ ব্যবহার করে পূর্ণাঙ্গ মথ মেরে ফেলতে হবে, নতুবা ব্যাগের ভেতর থাকাকালীন মারা একটু কষ্টসাধ্য ব্যপার হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন-সঠিক দমন পদ্ধতি উদ্ভাবনে আমাদের গবেষণা কার্যক্রম চলমান আছে। আশা করি খুব শিগ্রই আমরা একটি ভালো দমন পদ্ধতি উদ্ভাবনে সক্ষম হবো। এ গবেষণা দলের অন্যান্য গবেষক হলেন অধ্যাপক ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান এবং কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী মোঃ সাবি¦র তালুকদার, মোঃ রুবেল কাজী ও মোঃ সাদিকুল ইসলাম।##

Advisory Editor

Advisory Editor of http://www.krishisongbad.com/

Learn More →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *