মো. আব্দুর রহমান:
পিপিআর রোগের ফ্রি টিকা প্রদান : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিজস্ব উদ্যোগে টিকা প্রদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (০৭ অক্টোবর) ব্রহ্মপুত্র নদের পার্শ্ববর্তী চর দক্ষিণ কালিবাড়ি গ্রামে ভোর ছয়টা হতে দুপুর বারটা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলে। এর আগেও গত ১৫/৪/২০১৮ তারিখ ও ২০/০৪/২০১৮ তারিখে দুই দফায় টিকা প্রদান করা হয়েছে।
নিজস্ব উদ্যোগে এই টিম গত কয়েকদিনের কর্মসূচিতে পাঁচ শতাধিক ছাগলকে টিকা প্রদান করেছে এবং গ্রামের মানুষের সাহায্যের জন্য তারা গ্রামে গিয়ে ফ্রি চিকিৎসা প্রদান ও জনসচেতনা বৃদ্ধির কাজ করে যাচ্ছে।
নিজেদের উদ্যোগে এমন ব্যতিক্রমী কাজের কারণ জানতে চাইলে মুকিত মাহমুদ, প্রবীণ মিশ্র এবং আসিফ ইকবাল জানান, আমরা ক্লাসের ফাঁকে সবসময়ই ক্লিনিকে যাতায়াত করি এবং বিগত কয়েক মাসে আমরা জানতে পারি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে হলেও এই গ্রামটিতে প্রানিচিকৎসার সুযোগ খুবই কম এবং এখানে দরিদ্র মানুষের মাঝে টিকা প্রদানের জ্ঞান না থাকার কারনে প্রতিবছর অনেক বেশি পরিমান ছাগল মারা যায়। এতে করে এই গরীব মানুষেরা অনেক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। এমন কি অনেকে ছাগল পালন বন্ধ করে দিয়েছেন। তখন থেকেই আমরা এই ফ্রি টিকা প্রদানের ব্যাপারে উদ্যোগী হই।
এই টিম প্রফেসর ড. কে.এইচ.এম নাজমুল হুসাইন নাজির এবং প্রফেসর ড. এ.কে.এম আনিসুর রহমানের সাথে পরামর্শ করে সার্বিক সহযোগীতা গ্রহণ করেন।
তাদের টিকা প্রদান কর্মসূচিতে সহযোগিতা করেন অনুষদের মাস্টার্স শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান, লেভেল-৫ এর আশরাফুল ইসলাম, সালেকিন রাব্বি সুইট, শান্তা দাস, মৌ আক্তার, মৌমিতা মমি, লেভেল-৪ এর আশরাফুল, জাহিদ, আলমগীর, লেভেল-৩ এর আজরান কবির সামিন, আরমান মির্জা, ইসুরি পেরেরা, বিবেক, লেভেল- এর রবি, নিঝুম সহ প্রমূখ।
শিক্ষার্থীরা জানান, পিপিআর রোগের ফ্রি টিকা প্রদান উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয় এবং এমন কাজে নিজেরা অংশগ্রহন করতে পেরে আমরা অনেক খুশি।
মাস্টার্স শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান বলেন, ছোটভাই তিনটা অনেক আগে থেকেই ব্যতিক্রমী। তারা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন কাজ করে পারদর্শী এবং স্যারদের পূর্ণ সহযোগিতা পেলে তারা ভবিষ্যতে আরও ভালোকিছু করতে পারবে বলে আমি মনে করি।
গ্রামবাসীরাও তাদের এই উদ্যোগে অত্যন্ত খুশি এবং তাদের এই কর্মসূচিতে সারা দিয়ে প্রায় সকলেই তাদের ছাগলকে টিকা দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে আসেন।
টিমের অন্যতম সদস্য মুকিত মাহমুদ জানান, আমরা টিকা প্রদানের আগে গ্রামে সার্ভে করে পিপিআর রোগের বর্তমান অবস্থা জানতে চেষ্টা করি। প্রতি বছর অনেক ছাগল মারা যায় এই রোগের টিকা না দেবার কারনে। আমরা গ্রামবাসীদের মাঝে ফ্রি টিকা প্রদান করি ও তাদের মাঝে ছাগলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জ্ঞান প্রদান করি। এতে করে ছয় মাস পর আমরা আবার ও সার্ভে করে দেখতে পারি যে এবার এই রোগে ছাগলের মৃত্যু অনেক কমে গেছে।
মুকিত আরো বলেন, পরবর্তীকালে আমরা বিনামূল্যে কৃমিনাশক প্রদান করবে এবং ছাগল মৃত্যুর হার শূন্যে নিয়ে আসার জন্য কাজ করে যাবে।
অর্থায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আপাতত ক্ষুদ্র পরিসরে আমরা নিজেরাই ম্যানেজ করছি। পরে সকলের সহযোগিতা নিয়ে বড় পরিসরে কাজ করব।