বকুল হাসান খান
গ্ল্যাডিওলাস ফুলের উজ্জল রং, বিভিন্ন রংয়ের সমারোহ, আকার আকৃতির জন্য সবার কাছে আকর্ষণীয়। সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবে গৃহসজ্জায়, অনুষ্ঠানে ও উৎসবে ফুলের ব্যবহার হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় গ্লাডিওলাস সহজে চাষ করা যায়। দেশের যশোর, সাতক্ষীরা, গাজীপুর, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলায় এর বাণিজ্যিক চাষ হয়। গ্লাডিওলাসের উৎপত্তি স্থান দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইউরোপ মহাদেশে। ফুলটি চাষ করা খুবই সহজ এবং লাভজনক এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। চাষাবাদ পদ্ধতি জেনে নিন।
জাতঃ সাগদা, হলুদ, গোলাপী, ফিকেলাল, কমলা, লাল, গাড় ললি, বেগুণি ইত্যাদি রংয়ের ফুল হয়। জাতের মধ্যে চেরিব্লুসম, গোন্ডডাস্ট, এলিজাবেথ, অসকার, বেনারস, পলিগন ইত্যাদি।
মাটিঃ সব ধরণের উর্বর মাটিতে গ্ল্যভিওলাস চাষ করা যায়। তবে দোআশ বেলে, দোআশ মাটিতে ভাল হয়। জালবায়ূঃ আর্দ্র ও ঠান্ডা আবহাওয়া দরকার। ১৫-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেশি উপযোগী।
জমি তৈরিঃ সুনিষ্কাশিত উচু ও মাঝারি উচু জমি। এবং সূর্যাালোক পড়ে এমন জমি প্রয়োজন ৪/৫টি চাষ দিয়ে জমির মাটি ঝুর ঝুর করে সমতল করতে হবে। জমি তৈরির সময়ে প্রয়োজন পরিমাণ সার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ১৫ দিন রাখতে হবে।
রোপণ সময়ঃ গ্লাডিওলাসের কন্দ রোপণের উপযুক্ত সময় হচেছ মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাস।
বংশ বিস্তারঃ বীজ, গুড়িকন্দ, করমলেট দিয়ে বংশ বিস্তার করা হয়। তবে গুড়িকন্দ দিয়ে চাষ কারাই উত্তম। গুড়িকন্দের আকার ১০-১৪ সে. মি. উত্তম। ১ হেক্টর জমিতে ২লাখ ৬৫হাজার কান্দোর প্রয়োজন।
রোপণ পদ্ধতিঃ গুড়িকন্দ সারি থেকে সারির দুরত্ব ৩০ সেন্টিমিটার কন্দ থেকে কন্দের দুরত্ব ২০ সে. মি. কন্দ ৭-৮ সে. মি. গভিরে রোপণ করা উচিৎ। কন্দ রোপণের আেেগ বাইরের বাদামী রঙের খোসা খুব সাবধানে ছাড়য়ে শকনো স্থানে অন্ধকারে কয়েদিন রেখে বা ২৪ ঘন্ট পানিতে ভিজিয়ে নিলে আঙ্গরোদগম তাড়াতাড়ি হয।
সার প্রয়োগঃ প্রতি হেক্টর জমিতে গোবর ২০ টন, ইউরিয়া ২০০ কেজি, টিএসপি ২২৫ কেজি, ও এস,এফ ১৯০ কেজি প্রয়োজন। সম্পূর্ণ গোবর, টিএসপি, এস,পি জমি তৈরির সময় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সার সমান দুভাগ করে দুবার েিদতে হবে। চারটা পাতা বের হলে অর্ধেক ইউরিয়া বাকি অর্ধেক এর একমাস পরে প্রয়োগ করতে হবে।
পরিচর্যাঃ ভাল ফুল উৎপাদনের জন্য মাটিতে রসের অবস্থা বুঝে ২/৩ টির সেচ দিতে হয়ে। বিশেষ করে ফুলের কুড়ি ধরার সময় সেচ দিলে ফুলের বোঁটা শক্ত হয়। গাছের গোড়ায় পানি জমালে দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থ নিতে হবে।
জমিতে আগাছা জন্মালে নিড়ানি দেয়ে পরিষ্কার করতে হবে। জমির আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য খড়কুটা বা শুকনো খড় দিয়ে মাটি ঢেকে দিতে হবে। মাঝে মাঝে মাটি ঝুর ঝুরে করে দিতে হবে। গাছের গোড়ায় মাটি সরে গেলে মাটি তুলে দিতে হবে। ফুলের ভারে গাছে হেলে পড়লে ঠকা দিতে হবে।
রোগ বালাই দমনঃ গ্ল্যাডিওলাস ফিউজোরিয়াম রট, বট্রাইটিস রট, বট্রাইটিস ব্রাইট এবং ড্যাম্পিং অফ রোগে আক্রান্ত হয়। এছাড়াও শোষক, পোকা, জাবপোকা, নেমাটোড, ইউপোকা, মাইটস আক্রমণ করতে পারে। রোগ দমণের জন্য ব্রভিস্টন দিয়ে কন্দ শেধন করতে করতে হয়। পোকামড় দমণের জন্য ডায়াজিনন ৬০ ইসি ¯েপ্র করতে হয়।
ফুল চয়নঃ কন্ড রোপণের ৭৫-৯০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল ফুটতে শুরু করে। পুষ্পদন্ড সহ বেলড বা কাঁচি দিয়ে মাটি সমান করে গোড়ায় কাটতে হয়। ফুলের ২-১টি পাঁপড়িতে রং দেখা দিলেই কাটতে হয়।
প্রাপ্তিস্থানঃ বিভিন্ন জেলায় বাংলাদেশের কৃষি উ্ন্য়ন কর্পেরশনের হটিকালকচার সেন্টার সব জেলার সরকারি হাটকালচার সেন্টার এবং বেসরকারি নার্সারিতে কন্দ পাওয়া যায়।
আয় ব্যয়ঃ প্রতিটি কন্দের দাম ৫/ টাকা হিসেবে ক্রয় করা যায়। প্রতিটি পুষ্পদন্ডের উৎপাদনের জন্য খরচ হয় ৫. টাকা। বিক্রি করা যায় ৬/৮ টাকা প্রতিটি কন্দে প্রতিটি দন্ডে ১-২ টাকা লাভ হলে এক হেক্টর জমিতে ২লাখ ৬০ হাজার পুষ্পদন্ড হয়। এ হিসেবে লাভ হয় ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
বেশ ভালো লাগল। আরো লেখা চাই।