আবুল বাশার মিরাজ ও নাবিল তাহমিদ
অনেকদিন থেকেই অপেক্ষা, কবে আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান হলো। বিকাল সাড়ে ৩ টায়। ব্যাগ-প্যাক গুছিয়ে রওনা হলাম হ্যালিপ্যাডের দিকে। সাথে রাশেদ, তানভির, নিউটন, আলামিন। হ্যালিপ্যাডে আসতে না আসতেই কেয়ার পাগলাটে আবদার আমার সাথে সেলফি তুলবেই। সেই সেলফিতেই শুরু হয়েছিল স্মৃতিময় শিক্ষাসফরের ফটো অ্যালবাম। এক এক করে সবাই হ্যালিপ্যাডে এসে হাজির। ততক্ষণে বাসও চলে আসছে। আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৫ টায় আমরা রওনা দিলাম। যেই বাসে পায়েলের মত একটা বিনোদনের ডিব্বা আছে, সেই বাস ভ্রমণ যতই বড় হোক না কেন ক্লান্তি লাগবে না। সারারাত বাস ভ্রমণ শেষে ভোরের সূর্যের আলোতে দুই পাশের উঁচু নিচু পাহাড়ের বুক ঘেঁষে আঁকাবাঁকা পথে আমরা চলছি রাঙামাটির পথে। আহ! কি অপরূপ সৌন্দর্য। এই বাংলাদেশে জন্ম যেন আমার সার্থক।
সকালে আমরা পৌঁছালাম রাঙামাটির মৎস্য ভবনে। যাত্রা এবার রাঙামাটির কাপ্তাই লেক ভ্রমণ। দুই পাশে পাহাড়, মধ্যে ট্রলারে আমরা। ট্রলারের ছাদে শুরু হল গানের আসর। গানে গানে আর আড্ডায় আমরা এগিয়ে চলছি রাঙামাটির অপার সৌন্দর্য দর্শনে। একে একে সুবলং জলপ্রপাত, ঝুম পাহাড় দর্শন, চাংপাং রেস্টুরেন্টে ব্যাম্বু চিকেন নামক কাঁচা বাঁশ সিদ্ধ করে খেয়ে এবার চলছি বিখ্যাত রাঙামাটির ঝুলন্ত ব্রীজের দিকে।
রাতে ঘুম হোক বা না হোক ভোর পাঁচটায় উঠতেই হবে। যেতে হবে বান্দরবান। তাই বাধ্য হয়েই ভোর ৫টায় যাত্রা শুরু বান্দরবানের পথে। সকাল ৮টায় কুয়াশার আধার কেটে আমরা পৌঁছালাম স্বর্ণ মন্দিরে।
যাত্রা এবার নীলগিড়ির উদ্দেশ্যে। বাহন কাঙ্খিত চান্দের গাড়ি। উচুঁ উচুঁ পাহাড় বেয়ে আমরা চলে এলাম নীলগিরিতে। নীলগিরি দেখে ফিরলাম বান্দরবান শহরে। যাত্রা এবার নীলাচল দর্শনে। শহর থেকে একটু অদূরেই নীলাচল। নীলাচল শেষ করে মেঘ দর্শন। এবার চান্দের গাড়ি বিদায়। যাত্রা শুরু কক্সবাজারের দিকে।
অবশেষে চলে এলাম কক্সবাজারে। দূর থেকেই যেনো সমুদ্রের গর্জন শুনলাম। রাত বারটার দিকে সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন শুনলাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও এক অপরূপ সৃষ্টি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। সমুদ্রের ঠান্ডা জলে একটু একটু পা ছোঁয়ানো প্রিয়সীর নরম গালে হাত বোলানোর মতই সুখ।
সকাল ছয়টায় সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্য বাসে যাত্রা শুরু করলাম। সব অতিক্রম করে আমরা পৌঁছালাম বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বের শেষ সীমান্ত টেকনাফে। টেকনাফ থেকে জাহাজে করে যেতে হবে সেন্টমার্টিনে। জাহাজে শুরু হল পায়েলের মুরিদ বানানোর প্রক্রিয়া। গান আর আড্ডায় আমরা পৌঁছ গেলাম সেন্টমার্টিন দ্বীপের জাহাজ ঘাঁটে। পৌঁছালাম সেন্টমার্টিনের ময়নামতি রিসোর্টে। প্রবালের গায়ে ঢেউয়ের আছাড় যেন জানান দিচ্ছে তাদের শক্তির বহর। রাতে কক্সবাজারে পৌঁছে আগের মতই আবার লাবণীবীচে সমুদ্রের সাথে প্রেম। রাত যত গভীর হয়, প্রেম তত মধুর হয়।
চোখের পলকে ৭ দিন কেটে গেল ভাবতেই পারেনি। ৭ দিন হয়ত সময়ের হিসেবে শেষ হয়ে গেছে স্রোতের মত করে। কিন্তু এই ৭দিনে যা স্মৃতি অর্জন করেছি সেগুলো সারাজীবনই অবসর সময়ের সঙ্গী হয়ে থাকবে। কিন্তু এই ৭দিনে যা স্মৃতি অর্জন করেছি সেগুলো সারাজীবনই অবসর সময়ের সঙ্গী হয়ে থাকবে। জীবনে হয়ত আরও অনেক ভ্রমণ করব, অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গায় যাব কিন্তু প্রিয় বন্ধুগুলোকে একসাথে পাওয়া হবে না ভেবেই বুকের ভিতরের কোথায় যেনো চিনচিন করে উঠছে।