মো. মোশারফ হোসেন, নকলা (শেরপুর) :
বিনাধান-১৯’র নমুনা ফসল কর্তন
শেরপুরের নকলা উপজেলায় বিনা কর্তৃক উদ্ভাবিত স্বল্প মেয়াদী, ক্ষরা সহিষ্ণু ও উচ্চ ফলনশীল আউশ আবাদের বিনাধান-১৯ (নেরিকা মিউট্যান্ট) ধান এর সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে নমুনা ফসল কর্তন ও মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিবর্তিত আবহাওয়া উপযোগী বিভিন্ন ফসল ও ফলের জাত উন্নয়ন কর্মসূচীর অর্থায়নে এ মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়।
১৩ আগষ্ট সোমবার দুপুরে নকলা পৌরসভাধীন কোর্শাবাদাগৈড় এলাকার কৃষক আলমগীর হোসেন সেগুনের বাড়ীর আঙ্গীনায় ওই মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত ওই মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খামার বাড়ি শেরপুরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আশরাফ উদ্দিন।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বিনা ময়মনসিংহের মহাপরিচালক ড. বীরেশ কুমার গোস্বামী এবং অন্যান্যের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা শাফিকুল ইসলাম জিন্নাহ, ময়মনসিংহ বিনা’র পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও কর্মসূচী উইং) ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিনা) নালিতাবাড়ী উপকেন্দ্রের উর্ধŸতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসরীন আখতার, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর, বিনা নালিতাবাড়ী উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকমর্তা মো. ছামিউল হক, উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতিকুর রহমান, কৃষক আব্দুল মন্নাফ খা, আলমগীর হোসেন সেগুন, কৃষি সহায়ক আব্দুল হালিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এসময় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ, উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম সোহেল, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু মোতালেবসহ কৃষি বিভাগের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শ্রেণির নেতাকর্মী, বিনা ধানের চাষী, স্থানীয় কৃষক-কৃষাণী ও স্থানীয় সাংবাদিকগন উপস্থিত ছিলেন।
বিনা’র কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যমতে, বিনাধান-১৯ জাতটি জলবায়ু পরিবর্তন ও তার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে উত্তরণের জন্য নতুন ভাবে অভিযোজিত ও কৃষির ব্যপক পরিবর্তনে ভুমিকা রাখবে। এই জাতটি ২০১১ সালে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী হতে সংগৃহীত নেরিকা-১০ জাতের ধানে বিনা’র মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আবুল কালাম আজাদ গবেষণা মাধ্যমে নতুন এই জাত (বিনাধান-১৯) উদ্ভাবন করেন। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড হতে মাঠ পর্যায়ে চাষের জন্য ছাড় করন করা হয়। ২০১৮ সালে সম্প্রসারনের লক্ষ্যে পরীক্ষামূল ভাবে শেরপুর জেলায় ৭০জন কৃষকের মাঝে সার ও বীজ সহায়তার মাধ্যমে চাষ করানো হয়েছিল। এই জাতটি পোকা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং ক্ষরা সহিষ্ণু বিধায় কম পানিতে অধিক উৎপাদন করা সম্ভব। এই জাতটি স্বল্প মেয়াদী (৯৭ দিন হতে ১০৪ দিন), প্রতি হেক্টরে উৎপাদন ৪ টন থেকে ৫.৫ টন বা প্রতি একরে উৎপাদন ৪০ মন থেকে ৫৫ মন। তাছাড়া ধানটি চিকন হওয়ায়, বাজারে এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এই ধান চাষের ফলে কৃষকরা একই জমিতে চার ফসল ( আমন ধান, সরিষা, বোরো ধান ও আউশ ধান) উৎপাদন করতে পারেন। ফলে কৃষকরা অধিক লাভবান হচ্ছেন। এতে করে একদিকে যেমন কৃষক লাভবান হবেন, অন্যদিকে দেশের কৃষি অর্থনীতি উন্নয়নে ব্যপক প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন কৃষক, কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষি গবেষকগন। কৃষকের আগ্রহ দেখে মনে করা হচ্ছে যে, আগামীতে এই জাতের ধান চাষে শেরপুর জেলায় আলোড়ন সৃষ্টি হবে।