কৃষিবিদ ড. এম এ মজিদ মন্ডল
বাংলাদেশে ভিটামিন সমৃদ্দ ফলের মধ্যে আমড়ার স্থান অন্যতম। এর বহুমুখি ব্যবহারের জন্য সবার নিকট সমাদুত। আমড়ার দেশী ও বিলাতি দু রকম জাতের মধ্যে দেশী আমড়ার জন্ম স্থান বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে, আসাম ও বার্মায়। বিলাতি আমড়ার জম্ম স্থান ওটেহাইট ও ফ্রেগুলি দ্বীপপুঞ্জে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। দেশী আমড়ার (টক ও বীজ বড়) চাষ ধীরে ধীরে কমতেছে এবং বিলাতি আমড়ার (মিষ্টি ও বীজ ছোট) চাষ বাড়তেছে। বাংলাদেশে সরকারি ভাবে তেমন কোন উদ্যোগ না নেয়া হলেও ব্যক্তি পর্যায়ে ছোট ছোট বাগান আকারে দেখা যাচ্ছে।
উদ্ভিদতত্ত্ব ঃ আমড়া গাছ সাধারণত মাঝাড়ি থেকে বড় আকারের হয় এবং পএমোচী বৃক্ষ। গাছ সাধারণত বেশ উচু প্রায় ১০-১২ মিটার লম্বা হয়। নভেম্বরের শেষে পাতা ঝরতে থাকে এবং জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে মুকুল হয়।
পুষ্টিগুন ঃ আমড়া দিয়ে সুস্বাদু আচার, চাটনি ইত্যাদি তৈরি করা যায়। বিলাতি আমড়ার খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রামে ৮২.৬ ভাগ পানি, ১.১ ভাগ আমিষ, ১৫ ভাগ শ্বেতসার, ০.১ ভাগ স্নেহ, ০.২৮ মি গ্রা, থায়ামিন, ০.০৪ মি গ্রা রাইবোফ্লভিন, ৯২ মি গ্রা ভিটামিন সি, ৫৫ মি গ্রা ক্যাসিয়াম, ৩.৯ মি গ্রা লৌহ এবং ৮০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যরোটিন থাকে।
আমড়ার চাষ পদ্বতি ঃ-
মাটি ও জলবায়ু ঃ সুনিস্কাশিত যে কোন মাটিতে আমড়ার চাষ করা সম্ভব। পানি নিস্কাশন ভাল হলে প্রচুর বৃষ্টিপাতেও এ ফল ভাল জন্মে। উষ্ণ ও আদ্র আবহাওয়ায় এর চাষ ভাল হয়।
চারা তৈরী ও রোপন ঃ আমড়ার চারা সাধারনত বীজ থেকে করা হয়। বীজের অংকুরোদগম কম বলে পাকা আমড়াকে বীজ হিসাবে পুতে দিলে ভাল হয়। পলিথিনের ব্যাগে চারা তৈরী করে পরে মুল জমিতে লাগালে ভাল হয়। অংগজ উপায়ে বংশবিস্তরারের ক্ষেত্রে দেশী আমড়ার শাখার সাথে বিলাতি আমড়ার জোড় কলম করলে বেশী ভাল হয়। বানিজ্যিক বাগানে ৮-১০ মিটার দুরে ৯০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ,৯০ সেন্টিমিটার প্রস্ত, ৯০ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত করে জৈব সার দিয়ে পূর্ণ করে গাছ লাগাতে হবে। একটি ফলন্ত আমড়া গাছে প্রতি বছর ১ কেজি ইউরিয়া, ১ কেজি পটাশ, ১ কেজি টি এস পি সার দুপুর বেলা যতটুকু ছায়া পড়ে সে স্থানে মাটি আলগা করে প্রয়োগ করতে হবে।
ফল সংগ্রহ ও ফলন ঃ একটি আমড়া গাছ ২৫-৫০ ফল দেয়। ফেব্রুয়া-মার্চ মাসে গাছে মুকুল আসতে শুরু করে ও জুলাই – আগস্ট মাসে ফল পাকে। দেশী জাতের আমড়ার ফলন গাছ প্রতি ২০০-৩০০ কেজি আর বিলাতির ক্ষেএে ২৫০-৪০০ কেজি।
সুবিধা ( যে জন্য চাষ করা যায়) ঃ (১) বাংলাদেশের প্রচলিত ফল যেমন আম, কাঁঠাল, লিচু প্রভৃতি ফলের মধ্যে অধিকাংশ ফলের চেয়ে ফলন ও বাজার মুল্য বেশী, তাই এ ফল চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হওয়া যায়। (২) পতিত, অউর্বর, অনআবাদি যে কোন জমিতে জন্মানো যায়। (৩) রৌদ্র থেকে কিছু ছায়াযুক্ত স্থানে জন্মে ; তাই বাড়ির আশে-পাশ্বে, বাগান, বন, জঙ্গল, পাহাড়-পর্বত বিভিন্ন স্থানে সহজে জন্মানো যায়। (৪) তেমন কোন সার দেয়ার দরকার হয় না তবে বানিজ্যিক ভাবে চাষ করলে কিছু সার দিতে হবে।(৫) পুষ্টি সমৃদ্ব ফল হওয়ায় শরীরের জন্য উপকারী।
উপোরোক্ত বিষয়ের আলোকে বাংলাদেশে বাড়ির আশে-পাশ্বে, পতিত, অউর্বর জমিতে আমড়া চাষ করে পরিবার ও দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যেতে পারে।
—
লেখক ঃ প্রভাষক, কৃষিশিক্ষা বিভাগ, নাটোর সিটি কলেজ, নাটোর। মোবাইল ঃ ০১৭২২-৪০৩২২০