কৃষিবার্তা ডেস্ক
কর্মবিরতি ক্লাস-পরীক্ষা: অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহবানে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে । কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সামনে অনুষ্ঠিত কর্মবিরতি পালন অনুষ্ঠানে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. মুহাম্মদ আল মামুনের সঞ্চালনায় এবং সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ছফি উল্লাহ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। এদিকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালার প্রজ্ঞাপন হতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের অন্তর্ভুক্তি অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবিতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার পরিষদের উদ্যোগে প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। অফিসার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা.আফরাদুল ইসলামের সঞ্চালনায় এবং সভাপতি মোহাম্মদ ছায়াদ মিয়ার সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে অফিসার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় পেনশনার ও নমিনি আজীবন পেনশন পান, ৫% হারে ইনক্রিমেন্ট পাওয়া যায়, এছাড়া এককালীন বড় অঙ্কের অর্থ পাওয়া গেলেও চাপিয়ে দেয়া প্রত্যয় স্কিমে সব কিছু বাদ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন তিন মাসেরও অধিক সময় ধরে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে। ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিবৃতি প্রদান, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, প্রতীকী কর্মবিরতি, স্মারকলিপি প্রদান এবং অবস্থান কর্মসূচির মতো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় গত২৫,২৬ ও ২৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালিত হয় এবং ৩০ জুন থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হয়।
সিকৃবি শিক্ষক সমিতি সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ ছফি উল্লাহ ভূঞা বলেন, ‘আমরা আশা করি সরকার অনতিবিলম্বে এই যৌক্তিক দাবি মেনে নেবে, যাতে আমরা ক্লাসে ফিরে যেতে পারি। অন্যথায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে। তিনি আরও বলেন প্রত্যয় স্কিমের ফলে মেধাবীরা আর শিক্ষকতা পেশায় আসতে আগ্রহী হবে না। প্রত্যয় স্কিম হলো জাতিকে মেধাশূন্য করার একটা গভীর ষড়যন্ত্র।
মেধাশূন্য জাতিকে দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া যাবে না। জাতিকে সুপরিকল্পিত ভাবে মেধাশূন্য করার পাঁয়তারা চলছে।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত সার্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ কর্মবিরতি পালন করেছেন। প্রত্যয়স্কিম বাতিলের দাবিতে ১ জুলাই থেকে ৪ জুলাই অর্ধদিবস ও আগামী ৭ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতির কর্মসূচি দিয়েছে বাংলাদেশ আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন যাবৎ দাবি জানিয়ে আসলেও সর্বজনীন পেনশন স্কীম বিধিমালা-২০২৩ এর প্রজ্ঞাপন হতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার না করে উপরন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও পদোন্নতি/পদোন্নয়ন সংক্রান্ত অভিন্ন নীতিমালা সুপারিশ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছেন । বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অভিন্ন নীতিমালা সুপারিশ করার পূর্বে বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশনের সঙ্গে আলোচনা ও খসড়া উপস্থাপনের আশ্বাস দিয়েছিলো।
একই দেশে ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম থাকতে পারে না উল্লেখ করে কর্মকর্তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নয়ন সংক্রান্ত নীতিমালা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তাদের যে সকল সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সেগুলোর ব্যতয় রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত সার্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপনকে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক দাবী করেছেন তারা। অফিসার পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ ছায়াদ মিয়া বলেন, প্রত্যয় স্কিমটি হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী যখন সর্বজনীন পেনশন ঘোষণা করেন তখন প্রত্যয় স্কিম ছিল না। সাংঘর্ষিক ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা মাঠে থাকবেন বলে জানিয়েছেন সিকৃবি অফিসার পরিষদের সভাপতি ছায়াদ মিয়া।
উল্লেখ্য, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৩ মার্চ প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে এর বিরুদ্ধে সরব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশন। এতদিন কর্মবিরতি পালিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরীক্ষাগুলো এর আওতার বাইরে ছিল। কিন্তু আজ থেকে যে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হচ্ছে, সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষাসহ দাপ্তরিক সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন শিক্ষক ও কর্মকর্তাবৃন্দ।