মো. মোশারফ হোসেন, নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি:
সোলার লাইট ট্র্যাপ
প্রচলিত পদ্ধতিতে হারিকেন, হ্যাজাক লাইট অথবা বৈদ্যুতিক বাতি স্থাপন করে আলোক ফাঁদ তৈরি করা হয়। এই আলোক ফাঁদ প্রতিদিন সন্ধ্যায় জ্বালিয়ে সকালে বন্ধ করতে হয়। এতে খরচ ও শ্রম বেশি ব্যয় হয়। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)র এফএমপিএইচটি ও কীটতত্ত্ব বিভাগের গবেষকগন যৌথভাবে ফসলের মাঠে ব্যবহার উপযোগী সৌরশক্তি চালিত পরিবেশ বান্ধব একটি নতুন আলোক ফাঁদ উদ্ভাবন করেছেন। এটি সন্ধ্যায় নিজে থেকেই জ্বলে উঠে এবং রাত ১১টায় নিজে নিজেই নিভেযায়। ফলে খরচ ও শ্রম উভয়ই কম লাগে। কৃষকের ফসল সুরক্ষায় ব্রিÕর উদ্ভাবিত এটি একটি নতুন প্রযুক্তির সংযোজন।
ব্রি’র গণসংযোগ বিভাগের তথ্যমতে, আলোক ফাঁদ একটি জনপ্রিয়, সহজ, পরিবেশ বান্ধব কীটপতঙ্গ শনাক্তকরণ, পর্যবেক্ষণ ও দমন পদ্ধতি। জনপ্রিয় ও সহজ এ পদ্ধতিটি ব্যবহার করে ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় সহজে চিহৃত ও দমন করা যায়। তা মাথায় রেখে কৃষকদের সুবিধার্থে ফসলের মাঠে ব্যবহার উপযোগী সৌরশক্তি চালিত এই নতুন ও আধুনিক আলোক ফাঁদ উদ্ভাবন করা হয়েছে। এটি ব্যবহারে অতি সহজে শস্যের ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় চিহৃত ও দমন করা সম্ভব।
নতুন উদ্ভাবিত এই যন্ত্রটি মাঠে একবার স্থাপন করলে দীর্ঘদিন টিকে থাকে। এটি সূর্য্যের আলোর অনুপস্থিতিতে তথা সন্ধ্যায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলে উঠে এবং নির্দিষ্ট সময় শেষে (রাত ১১টার দিকে) নিভে যায়। সম্পূর্ণ প্রযুক্তিটি একটি সৌর প্যানেল, একটি ব্যাটারি, একটি কন্ট্রোলার, একটি বৈদ্যুতিক বাতি এবং কেরোসিন মিশ্রিত পানি ও পাত্র এবং একটি স্ট্যান্ডের সমন্বয়ে তৈরি। ছোট আকারে এটি তৈরী করতে এক হাজার ২০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়। এতে ব্যবহৃত ব্যাটারি ও বৈদ্যুতিক বাল্বের জীবনকাল দুই বছর এবং সৌর প্যানেলের মেয়াদ ২০ বছর বলে জানিয়েছেন উদ্ভাবকগন। তারা জানান, প্রযুক্তিটি দেশব্যাপী সম্প্রসারণ করা গেলে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে কৃষকরে ফসলের মাঠে ক্ষতিকারক পোকা দমন করা সহজ হবে। যার ফলে এক দিকে ক্ষতিকর কীটনাশকের ব্যবহার কমবে এবং পরিবেশ থাকবে নির্মল; অন্যদিকে বিদেশী ওষুধ (কীটনাশক) ক্রয় বাবদ প্রচুর টাকা ব্যয় করতে হবেনা।
নতুন এই আলোক ফাঁদ (সোলার লাইট ট্র্যাপ) প্রযুক্তিটি ফসলের মাঠের পাশাপাশি ধান ও মাছের মিশ্রচাষে এবং পুকুরেও ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। এই ফাঁদ পুকুরে ব্যবহার করলে ফাঁদে আকৃষ্ট পোকামাকড় পানিতে পড়লে, তা মাছ সরাসরি সম্পূরক খাবার হিসাবে খেতে পারবে। এই আলোক ফাঁদ ব্যবহার করলে কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহার কমবে। এতে কৃষকদের ফসলের উৎপাদন খরচ কমে, বাড়বে নিরাপদ ফল, শস্য ও ফসল উৎপাদন; এমনটাই আশা করছেন ব্রি’র এফএমপিএইচটি ও কীটতত্ত্ব বিভাগের গবেষকগন।
ব্রি’র উদ্ভাবিত সোলার সিস্টেম অটোমেটিক আলোর ফাঁদটি (সোলার লাইট ট্র্যাপ) দেশব্যপী প্রচার-প্রসার ও জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে সম্প্রতি (৪ সেপ্টেম্বর) জামালপুর জেলার সদর উপজেলার দিগপাইত ইউনিয়নের চিনাইল ছোনটিয়া এলাকায় এই সোলার লাইট ট্র্যাপ স্থাপন উদ্বোধন করা হয়। এ উপলক্ষে ব্রি জয়দেবপুর, গাজীপুর ও অতিরিক্ত পরিচালক ময়মনসিংহ এর কার্যালয়ের সহযোগিতায় এবং জামালপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিসের বাস্তবায়নে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে উপজেলা কৃষি অফিস।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাখাওয়াত ইকরাম এর সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আসাদুল্লাহ এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে জামালপুর খামার বাড়ীর উপ-পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (পিপি) কৃষিবিদ মো. সাইফুল আজম খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া উপসহারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রমজান আলীসহ অন্যান্য কৃষি কর্মকর্তা ও স্থানীয় কৃষক-কৃষানীগন উপস্থিত ছিলেন।
অতিরিক্ত পরিচালক মো. আসাদুল্লাহ জানান, ব্রি’র উদ্ভাবিত এই সোলার সিস্টেম অটোমেটিক আলোর ফাঁদ (সোলার লাইট ট্র্যাপ)টি জনপ্রিয় করে তোলতে ময়মনসিংহ অঞ্চলের কৃষকদের জন্য ৫টি ফাঁদ উপহার হিসেবে বিনামূল্যে দিয়েছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোণা ও ময়মনসিংহ এই চার জেলার মধ্যে একটি জেলায় দুইটি ফাঁদ এবং অন্য তিন জেলায় একটি করে উপহার পাওয়া এই সোলার সিস্টেম অটোমেটিক আলোর ফাঁদ স্থাপন করা হবে বলে তিনি জানান। এই আলোক ফাঁদের চাহিদা এবং উৎপাদন বাড়লে দাম কমবে বলে আশা করছেন কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাগন। তখন সব কৃষকরা ব্যবহারের সুযোগ পাবেন।